দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনার পর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন বিমা কোম্পানি।
নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমা রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত সহিংসতার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ বা নাশকতামূলক কাজের ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয়ে তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গাজী টায়ার্সের কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। অনেকের দাবি, এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু দেশ আগে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি, তাই অতীতে নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমায় ব্যবসায়ীদের কোনো আগ্রহ ছিল না।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সব শিল্প কারখানা অগ্নি বিমার আওতাভুক্ত।
সুতরাং যখন প্রাথমিক বিমাকারীরা তাদের পুনঃবীমা সরবরাহকারীদের কাছে দাবি জানিয়েছে, তখন দেখা গেছে তারা পুরো সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ অগ্নি বিমার মধ্যে অন্তর্ঘাত বা সন্ত্রাসবাদের ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইনভেস্টোপিডিয়া অনুসারে, পুনঃবিমা বলতে প্রাথমিক বিমাকারীদের অন্য বিমা সংস্থার কাছ থেকে কেনা বিমাকে বোঝায়, যেন বিমাকৃত ঝুঁকির কিছু অংশ পুনঃবিমাকারীর কাছে স্থানান্তরিত হয়।
নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ কে এম মনিরুল হক বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমার প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই, এখন অনেক ব্যবসায়ী এই বিমা নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা পুনঃবিমাকারীদের দাবির বিপরীতে অন্তত কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও প্রাথমিক বিমাকারী ও পুনঃবিমাকারী উভয়ই দিন শেষে ব্যবসা করতে চাই, আমি আমার দিক থেকে যতটা সম্ভব দাবি পরিশোধ করার চেষ্টা করব।’
এদিকে গত মাসের শুরু থেকে অসংখ্য কারখানায় বারবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। একইসঙ্গে এই কারখানাগুলোর কয়েক হাজার শ্রমিকের জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৭ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় তিন ডজন শিল্প কারখানায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মালিক গত সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত৷ গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে তার সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান হয়।
ওই গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। এতে ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারেক বলেন, ‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
সাম্প্রতিক সহিংসতা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এটা ভালো দিক যে ব্যবসায়ীরা এখন বিমার মাধ্যমে এ ধরনের ঝুঁকি কমানোর কথা ভাবছেন।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কয়েকটি কোম্পানি নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
খালেদ মামুন বলেন, ‘সময়মতো সঠিক বিমা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।’
‘তাছাড়া অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন বিমা কেনা মানেই কোনো বিনিময় ছাড়া টাকা দেওয়া। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়।’
নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশে ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ কে এম মনিরুল হক বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাস বিমার প্রিমিয়ামের হার কত হওয়া উচিত তা নির্ধারণে তারা কাজ করছেন।
‘আশা করছি, আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আমরা এটা ঠিক করতে পারব,’ বলেন তিনি।
বার্তাবাজার/এমআই