বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের নানা দুর্নীতির খাতের মধ্যে অন্যতম আইসিটি সেক্টর। বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি প্রজেক্ট হলো এজ প্রজেক্ট (Enhancing Digital Government & Economy or EDGE)। আজ আমরা জানব, কীভাবে আছিয়া নীলার কোম্পানি “উইমেন ইন ডিজিটাল” এজ প্রজেক্টের হায়ার এন্ড ট্রেইন প্রোগ্রাম হাতিয়ে নেয়। তবে এর আগে, আছিয়া নিলার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে হবে।
আছিয়া নীলার বাবা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন। কিছুদিন চাকরি করার পর, ২০১৬ সালে উদ্যোক্তা হিসেবে “উইমেন ইন ডিজিটাল” প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানটি নারীদের নিয়ে সেমিনার ও প্রশিক্ষণের কাজ করলেও, আস্তে আস্তে আছিয়া নীলা আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেন। ২০১৭ সালে “ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর উইমেন” প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফিফো টেকের সিইও তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তৌহিদ হোসেনের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সঙ্গে পরিচিত হন। যেহেতু নিলার প্রতিষ্ঠানটি মেয়েদের নিয়ে কাজ করে, পলকের নজরে পড়েন তিনি। এছাড়া নীলার বাবার পরিচয়ের কারণেও তিনি পলকের আস্থার পাত্রী হয়ে ওঠেন। নীলা আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রজেক্ট দখল করার জন্য ধীরে ধীরে মেয়ে সরবরাহ শুরু করেন। এভাবেই পলকের পিএস মো. আব্দুল বারী (EDGE প্রজেক্টের পলিসি এডভাইজর) এবং ফাইজ আহমেদের (টিম লিডার, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
২০২৩ সালে, EDGE প্রজেক্টের আওতাধীন হায়ার এন্ড ট্রেইন প্রোগ্রামের অধীনে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে “উইমেন ইন ডিজিটাল” নির্বাচন হয়। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি বৈশিষ্ট্যের একটিও নীলার প্রতিষ্ঠানের ছিল না। সরেজমিনে দেখা যায়, ‘উইমেন ইন ডিজিটাল’-এর শুধুমাত্র এক রুমের একটি অফিস (House: 50/51, Road: 3, Janata Housing, 1207 Ring Rd, Dhaka 1207, Bangladesh) রয়েছে।
নীলা প্রতারণার মাধ্যমে বেনামে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের (luminadev.com, mashtor.com) নাম ব্যবহার করে আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে ফান্ড নিয়েছেন, যেগুলো আনফিট হিসেবে বিবেচিত হতো। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তাকে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রজেক্ট না পেলে ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিতেন। পলককে যারা মেয়ে সরবরাহ করতেন, তাদের মধ্যে আছিয়া নীলা অন্যতম।
এভাবেই নারী ক্ষমতায়নের নাম করে আছিয়া নীলা নারী সরবরাহের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ লুট করেছেন এবং সাধারণ থেকে মাফিয়া হয়ে উঠেছেন।