বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বানভাসি মানুষ। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, সেতু ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক পরিবার সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে।
ঘর ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই এখনো অন্যের বাড়িতে থাকছেন। কিছু মাটির ঘর পানিতে নরম হয়ে গেছে। এ কারণে ভয়ে অনেকেই ঘরে উঠছেন না। আসবাবপত্র ভেসে যাওয়া নিয়েও সমস্যায় অনেকে। বীজতলা ও রোপণ করা জমির ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক কৃষক। বন্যার পানিতে পুকুর থেকে মাছ ভেসে যাওয়ায় লোকসান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চার শতাধিক মাছের খামার রয়েছে। সবগুলো খামারই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে পুর্নবাসনের ব্যাবস্থা নেয়া হবে। সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাঊড়া ও কসবা থেকে বন্যার পানি সরে গেছে। দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়িঘরে ফিরলেও তাদের দুর্ভোগ কাটেনি। বানের পানিতে ঘরবাড়ি ও জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ায় চরম বিপাকে তারা। বসতঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় অনেকের মাথা গোজার ঠাঁইও মিলছে না। বন্যায় জেলার ব্রিজ, কালভার্ট ও পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। কৃষি ও মৎসখাতে খতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে দুইশ’ কোটি টাকা। জমির ফসল, পুকুরে মাছসহ সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব বন্যাকবলিত মানুষ। আগামী দিনে কি করবেন তা নিয়ে তারা সংশয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বন্যায় ভেঙে পড়া রাস্তঘাট দ্রত মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারী সহায়তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারনের পর, পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৪৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন ৫০ হাজার মানুষ। মারা যান সুবর্ণা নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীও। কৃষকের ক্ষতি হয় ১২০ হেক্টর বীজতলা, ১,৭৭০ হেক্টর আমন ও ৭৫ হেক্টর সবজি। ভেসে গেছে ৪৩০টি মৎস্য খামার। এতে পানিতে ভেসে যায় ১২ কোটি টাকার মাছ। মারা যায় ৬৫টি গরু, ৯৫টি ছাগল, ১৫টি ভেড়া, প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মুরগি এবং সহস্রাধিক হাঁস। এ ছাড়াও ২৫৩টি গবাদি পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রহিমপুর, রাজেন্দ্রপুর, খলাপাড়া, আইড়ল, ইটনা ও কর্নেল বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবখানেই বন্যার ক্ষত। বেশিরভাগ এলাকার পানি শুকিয়ে গেলেও বন্যার্তরা এখনো নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার সংগ্রামে ব্যস্ত। এর মধ্যে আইড়লে দেখা গেছে ভেঙে যাওয়া সড়ক পারাপারে বাঁশের সাঁকো তৈরি করছে স্থানীয় লোকজন। বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় ১৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৬ কিলোমিটার আধাপাকা রাস্তা, ১৯ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ১১টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিক জায়গায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। গাজীরবাজার সেতু ভাঙার কারণে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে বন্ধ থাকার পর গত সোমবার বেলা ১২টা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু হয়। এর আগে গত রোববার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অনেক যাত্রীর। পরে তাদের আসা-যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এখন প্রতিদিনই ভারত থেকে অনেক যাত্রী ফিরছেন।
বার্তাবাজার/এসএইচ