ভারতের বিতর্কিত ধনকুবের ব্যবসায়ী গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গ্রুপ এনডিটিভির মালিকানা গ্রহণের ৪ মাসের মধ্যে দেশটির অন্যতম শীর্ষ এই সংবাদমাধ্যমের মুনাফা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ। দেশি-বিদেশি বিজ্ঞাপন খাত থেকে আয় কমে যাওয়াই এই হ্রাসের মূল কারণ।

গত ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অব্যাহত গতিতে বাড়ছে মার্কিন মুদ্রা ডলারের মান, যার জেরে মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে এবং এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বাড়িয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচ কমাতে বিজ্ঞাপনবাবদ ব্যয় কাটছাঁট করছেন ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তরা। তার প্রভাব পড়েছে এনডিটিভির মুনাফার ওপরও।

সম্প্রতি ২০২৩ সালের এক জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আয়ের বিবরণী প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। তাতে দেখা গেছে, বছরের প্রথম তিন মাসে এনডিটিভির নিট মুনাফা অর্জন করেছে ৫৯ লাখ রুপি। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এনডিটিভির অর্জিত মুনাফা ছিল ২ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার রুপি। শতকরা হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে এনডিটিভির মুনাফা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ।

১৯৮৮ সালে সাংবাদিক দম্পতি প্রণয় রায় ও রাধিকা রায় এবং অপর সাংবাদিক রবীশ কুমারের হাত ধরে যাত্রা শুরু সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল নিউ দিল্লি টেলিভিশন লিমিটেডের, যা পরবর্তীতে মূল নামের সংক্ষিপ্তরূপ এনডিটিভি নামে পরিচিতি পায়।

পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই টেলিভিশন কোম্পানির ৬৪ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় আদানি গ্রুপ, প্রণয় রায় ও রাধিকা রায়ও তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে কোম্পানির পদ থেকে অব্যাহতি নেন।

তবে এনডিটিভির এই মুনাফা ধসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্মের প্রতিবেদনও খানিকটা দায়ী। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ। সেখানে বলা, দশককাল ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ এবং কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির মতো এনডিটিভির শেয়ারের দামও পড়তে শুরু করে। পরে অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও এনডিটিভির শেয়ারের দামে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।