জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রাতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগত পুলিশ কনস্টেবল কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে বিচার ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার বেলা আড়াইটায় (১২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

গত ১১জুন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন রাস্তায় অবৈধ ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ সমেত বহিরাগত দুইজন (এরমধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল) দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম আবর্তনের এক নারী শিক্ষার্থী যৌন হেনস্তার শিকার হয়। ঘটনার পরে সেই নারী শিক্ষার্থী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

ছবি: বার্তা বাজার

মানববন্ধনে দাবি শিক্ষার্থীরা ছয় দফা জাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো-ঘটনা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ যথাযথ ভাবে হচ্ছে কিনা তার তদারকি করা, ঘটনায় হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত ভাবে শিক্ষার্থীদের জানানো, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ, ক্যাম্পাসে মূল সড়কগুলোতে সিসিটিভি স্থাপন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত করা, অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়কগুলোতে রাত্রিকালীন পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থা করাসহ পর্যাপ্ত যানবাহন নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসে যাতায়াত নিরাপদ করা।

মানববন্ধনে নাটক ও নাট্য বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি (৫১ তম ব্যাচ) বলেন, আমরা স্বাধীন দেশে ও স্বাধীন ক্যাম্পাসে থেকেও নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে বলতে বাধ্য হচ্ছি যা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তার দাবি জানাই। আমাদের দাবি বাস্তবায়িত নাহলে প্রশাসন ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না করলে আমরা ৫২’এর মতো আন্দোলনে সুগঠিত হবো। আমরা চাই প্রশাসন ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী বেদত্রয়ী গোস্বামী পৃথা (৫০ তম ব্যাচ) বলেন, আমি যখন প্রথম পরিচয় দিই যে আমি জাহাঙ্গীরনগর পড়ি তখন বলতে পারি যে পুরো বাংলাদেশই জাহাঙ্গীরনগরের মতো নিরাপদ হওয়া উচিত কিন্তু সম্প্রতি এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে যার জন্য আমাদেরকে নিরাপত্তার জন্য এভাবে দাঁড়াতে হয়েছে। আজকের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হলে অপরাধীরা আরও বেড়ে উঠবে। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত হওয়া উচিত। আমাদেরকে নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনকে জবাবদিহি হতে হোক তা আমরাও চাইনা।দ্রুততম সময়ে ঘটনার বিচার নিশ্চিত হতে হবে।

পূর্ণতা রহমান তৌসি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি এর আগেও ক্যাম্পাসের এমন অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। তারা বারবার এরকম করছে এর জন্য আমরা বলতেই পারি যে প্রশাসনের নিশ্চুপ থাকা এর পেছনে অন্যতম একটি কারণ। এটা তো একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা নিরাপত্তার জন্য এখানে অবশ্যই প্রশাসনের কাছেই যাবো। মূল সড়কগুলোতে সিসিটিভি বসাতে হবে ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তী এই আসামির বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপগুলো আমাদেরকে জানাতে হবে। এর আগেও নারী শিক্ষার্থীদের সাথেও ছিনতাই ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য প্রশাসনকে সুনিশ্চিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বার্তাবাজার/এম আই