কুমিল্লার মুরাদনগরে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভোর রাতে উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি করতে যেয়ে জনতার হাতে আটক হয়ে গণপিটুনীতে ওই একই এলাকার ডাকাত সর্দার মনির ওরফে মইন্ন্যা ডাকাত নিহত হন। এ ঘটনার সাথে জড়িত না থাকার পরও তৎকালীন সময়ে পূর্ব বিরোধ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষপাত তদন্তে এ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামীসহ আরো ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ অন্যান্য আসামীরা সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এ হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছেন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘুষ নেয়াসহ তদন্তে মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দের বিচার দাবি করেছেন তারা।

এ উপলক্ষে এ মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার ও কথিত তদন্ত রিপোর্টের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মো. ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী নাছিমা বেগমের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনসহ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন বলেও জানাগেছে। মিথ্যা মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার মো ময়নাল হোসেনের ভাই বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার বাড়ীর পাশে গণপিটুনিতে নিহত এক ডাকাত হত্যাকাণ্ডের ‘হাস্যকর তদন্ত’ আমাদের তথা সকল আসামী পরিবার থেকে বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ ও তার সোর্স আতাউল্লাহ আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েক দফায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা নিয়েও আরো টাকা চাইলে আর টাকা না দেয়াতে সে আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়।অপরদিকে ডাকাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ডাকাত সর্দার মনিরসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঘটনারদিন সকালেও একটি ডাকাতি মামলা রজু হয়েছিল। সে মামলার বিচারকার্য এখনো চলমান। বর্তমানে ওই মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে আবারো হুমকিধমকি অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া ডাকাত নিহত হবার ঘটনায় মিথ্যা মামলায় সবাই খালাস পেলেও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ওই মামলায় মো. ময়নাল হোসেন ও নাছিমা বেগমের যাবজ্জীবন দন্ড হওয়ার বিষয়টা ধূম্রজালের সৃষ্টি করে। মুরাদনগরের সর্বস্তরের মানুষ গণপিটুনিতে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেছিল, তা ছাড়া ওই সময়ে ডাকাতির পরিকল্পনাকারী কারা, এর পেছনের শেল্টারদাতা কারা, তা জানা যায়নি। তাই সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে পুনঃতদন্তের দাবি জানান তাঁরা। উল্লেখ্য- ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভোর রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ডাকাতি করতে যেয়ে জনতার হাতে আটক হয়ে গণপিটুনীতে ওই একই এলাকার ডাকাত সর্দার মনির ওরফে মইন্ন্যা ডাকাত নিহত হন।

২০১৬ সালের ৭ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসএআই শাহ কামাল আকন্দ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর গত ২০২২ সালের (১৭ মে) মঙ্গলবার কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের তৃতীয় আদালতের বিচারক বেগম রোজিনা খাতুন রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩ জন আসামী বেকসুর খালাস পেলেও দন্ডপ্রাপ্ত হন মো. ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী নাসিমা বেগম। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বার্তাবাজার/এসএইচ