ভারতের পানির ঢলে আখাউড়া বাঁধ বেঙে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে আরো কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা নাগাদ বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ ৩৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়।পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ পরিবার। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানি জমি, শাক-সবজির জমিসহ বিভিন্ন মাছের ঘের। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। বন্ধ হয়ে পড়ে বন্দরের বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। এদিকে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছেন ।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি জানান, দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মধ্যে দেওয়া হবে।

[কসবা]

সালদা নদীর তীরে গড়ে উঠা কসবা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হলো বােয়ক ইউনিয়ন
ভারতীয় পাহাড়ি ঢ’লে নেমে আসা বন্যার পানিতে বায়েক ইউনিয়নের ৩৪ টি গ্রামের প্রায় ৫০০ শতাদিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্ধি রয়েছে।

ফসিল জমিসহ পুকুরের বাধ ভেঙে মাছ চলে গেছে বন্যার পানিতে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার ভোর সকাল থেকে বায়েক ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রথমে পানি ঢুকে। পরে তা ধীরে ধীরে পুরো ইউনিয়নে প্রবেশ করে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো:শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, কসবায় বায়েক ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ টি পরিবার বন্যার পানিতে কবলিত। সরেজমিনে গিয়ে শুকনো খাবার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোজখবর নেওয়া হচ্ছে।

[বিজয়নগর]

বিজয়নগর উপজেলায় ভারত থেকে বয়ে আসা লৌহ নদী পাহাড় পুর ইউনিয়ন হয়ে হরষপুর ইউনিয়নে প্রবেশ করায় বন্যার পানিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকটি গ্রামের ৩০ টিরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবয়ান কর্মকর্তা শাহিনুর জাহানের দেওয়া তথ্যমতে, ৪ টা গ্রামে ৩০ টি পরিবারসহ শতাদিক মানুষ পানিবন্ধি রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক জানান,ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর জন্য শুকনো খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। নিয়মিত খোজখবর নেওয়া হচ্ছে।

[জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা কৃষি অফিসারের তথ্য]

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল আলম জানান, হাওড়া নদী ও জাজীর খালসহ বিভিন্ন স্থানে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। তা অতিক্রম করলে আরো এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, পাহাড়ি ঢলে ১৯৫ হেক্টর শাক-সবজির জমি, ১২২ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৩৪৪০ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। দ্রুত পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। এক সপ্তাহ পর ক্ষয়ক্ষতির চুড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।