আনোয়ার পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। মিস্ত্রীর কাজ করে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলতো তার সংসার। আনোয়ার বিয়ে করার কিছুদিন পর যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলো তখন তার বাবা খরচের জন্য তাকে কিছু টাকা দেয়। বাবার দেওয়া সে টাকায় বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে ৮ টি হাঁস কিনে। এক সময় হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। সেই ডিম থেকে শুরু করেন বাচ্চা ওঠানো। ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু খামার। আসতে শুরু করে টাকা। এভাবেই নেশা থেকে পেশায় পরিনত আনোয়ারের হাঁস পালন।

মিস্ত্রী কাজ করার পাশাপাশি ২০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে তার হাঁসের খামার। দুই হাজার ১১ সালে মিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পরে গিয়ে ভেঙে যায় তার পা। সাংসার চালানোর এক মাত্র ভরসা ছিলেন তিনিই। এ কারণে তার সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। অনেক কষ্টে করে ঘুড়ে দাঁড়ায় আনোয়ার। কমতি ছিলনা তার স্ত্রী মর্জিনার ভূমিকাও। প্রতিবন্ধী রাজ মিস্ত্রী আনোয়ার এখন বছরে ৭০-৭৫ দিন হাঁস পালন করেন। এ সময় হাঁস বেশিরভাগ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে দ্রুত বড় হয়, এতে খরচা অনেক কম হয়, লাভ হয় বেশি। এ বছর ৬৫-৭০ দিনে হাঁস পালনে ৩ লাখের বেশি টাকা লাভের আশা তার। প্রতিবন্ধী আনোয়ার মৃত তছকিন উদ্দিন ধুলুর ছেলে। সে কালাই উপজেলার আঁওড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার জম্ম একই উপজেলার পুর গ্রামে হলেও ছোট থেকেই সে তার মামার বাড়ি আঁওড়া সোনাপাড়া গ্রামে বড় হয়েছে।

আনোয়ার তার সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, পা ভাঙ্গার পরে যখন সুস্থ হয় তখনো সংসার ছিলো টলমল। এ সময় আমার শ্যালিকা ৪০ টি হাঁসের বাচ্চা পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে আয় হয় দশ হাজার টাকা। পরবর্তীতে আমি ধীরে ধীরে বেশি হাঁস তুলতে শুরু করি। অনেকেই আমাকে নিশেধ করলেও আমি শুনিনি। মিস্ত্রী করার পাশাপাশি এটি আমার বাড়তি আয় আসতে শুরু করে।
তিনি বলেন, বছরে এ সময় একবার যখন মাঠ ফাঁকা থাকে তখন হাঁস পালন করলে খুব ভালো লাভবান হওয়া যায়। এখন হাঁসের চাহিদাও থাকে ভাল, তেমন ভাল দাম পাওয়া যায়। গত বছর ১২শ’ বাচ্চা ক্রয়সহ এর পিছনে ৯০ হাজার টাকা খরচা করে ৭০ দিনে লাভ হয়েছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। অন্য কাজ করে টাকায় এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নই। তাই এ বছর খাকি ক্যাম্বেল বাচ্চা তুলেছি ২৮শ’, এর মধ্যে বিক্রি করেছি ৩ লক্ষ টাকার আর যা আছে তাতে ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবে বলে আশা ।

তিনি আরো বলেন, ২৮শ’ বাচ্চাসহ বড় করে তোলা পর্যন্ত খরচা হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ৬৫-৭০ দিনে বাচ্চার ওজন হয়েছে ৮০০-১০০০ গ্রাম। কোন ব্যক্তি খাকি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা কিনে পালন করতে চায় তাদের বর্ষা মাসে মাঠ খালি থাকার সময় বাচ্চা কিনে পালন করার পরামর্শ দেন। এতে খরচা হবে কম লাভ হবে অনেক বেশি।
পরিশেষে তিনি জানান, আমি প্রতিবন্ধী হিসেবে খামারটিকে অনেক কষ্টে করে তুলেছি। কিন্তু, এর পেছনে আমি সরকারি কোন সাহায্য ও সহযোগিতা পাইনি। যদি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাই তাহলে খামারটিকে আরো সুন্দর এবং বড় করতে পারবো। হয়তোবা তখন আমার খামার থেকে অনেকের বেকারত্বের দুয়ার খুলে যাবে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ হাসান আলী বলেন, ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ খামারি যারা আছে সরকারি যে সুবিধা আছে সেটা আমরা দিয়ে থাকি। আমাদের ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার মাঝে মাঝে প্রণোদনা দেয় সেটা আমরা খামারিদের মাঝে পৌঁছে দেই। তবে খামারিকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে এসে আমরা ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করে হইত লোন উত্তোলন করে দিতে পারি।