কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা যেন দিনকে দিন বাড়ছেই। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সাথে নিয়ে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।

ফলে দুই কোরিয়ার মধ্যে বাড়ছে আবারও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কাও। আর এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, পরমাণু হামলা চালালে উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের সঙ্গে বৈঠকের পর বাইডেন এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ং তার নিজস্ব অস্ত্রাগার ব্যবহার করলে দেশটি পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে এবং উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বের শাসনের ‘অবসান’ করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল।

গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন যান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। পরদিন বুধবার জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন তারা।

হোয়াইট হাউসে বক্তৃতাকালে এই দুই নেতা বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য মার্কিন নিরাপত্তা ঢালকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।

এসময় উভয় নেতা স্পষ্ট করে দেন, বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট ও একনায়ক শাসক যদি দক্ষিণ কোরিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করে, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হবে বিধ্বংসী।

ইউনের সাথে যৌথ ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়া কোনও ধরনের পারমাণবিক হামলা চালালে… সেখানে যে শাসনব্যবস্থাই থাকুক, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে সেটির অবসান ঘটবে।’

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, ‘অপ্রতিরোধ্য শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমে শান্তি রক্ষা করাই তার অগ্রাধিকার’। তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার ঘটনা ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রসহ জোটের পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে দ্রুত, অপ্রতিরোধ্যভাবে এবং বিধ্বংসীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্মত হয়েছে ওয়াশিংটন এবং সিউল।’

এছাড়া উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় বৃহত্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকার বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য রাষ্ট্রীয় সফরে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান এবং সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় নেতা এই দুই মিত্র রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান ভাবে দ্রুতগতিতে আন্তঃমহাদেশীয় এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে কেবল গত বছরই ৬০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বারবার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য পরীক্ষা চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। আর তাই তাদের মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।