ভুয়া দলিলে গুরুদাসপুরের হাঁসমারি ফোরকানিয়া মাদরাসার জমি দখলে নিতে এলাকাবাসীর নামে মামলা দায়ের করেছেন সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। মাদরাসার শিক্ষকসহ গ্রামের সাধারণ মানুষদের মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে। মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের হাঁসমারি ফোরকানিয়া মাদরাসার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ পালন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫‘শর বেশি মানুষ।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে হাঁসমারি ফোরকানিয়া নামে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয় ১৯৬৮ সালে। মাদরাসাটির নামে ভিটাসহ প্রায় ৫ বিঘার মতো কৃষি জমিও রয়েছে। দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি ২০০৩ সালের দিকে ওই প্রতিষ্ঠানে সতন্ত্র এবতেদায়ী পর্যায়ের শিক্ষা চালু করা হয়। দীর্ঘ বছর ধরে একই সাথে দুই শাখার শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছিল।
স্থানীয় মনিরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ আলী, আজিমুদ্দিন, খুরশেদ আলমসহ অন্তত ৫০ জন অভিযোগ করেন, বেশকিছুদিন আগে ফোরকানিয়া ও এবতেদায়ি মাদরাসার দুই শাখার সভাপতি করা হয় স্থানীয় সাইফুল ইসলামকে। সাইফুল ইসলাম সভাপতি হওয়ার পর তার আত্মীয়দের এবতেদায়ি শাখায় চাকুরি দেন। একপর্যায়ে ফোরকানিয়া মাদ্সার কার্যক্রম বন্ধের চাপ দেন এলাকাবাসিকে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এলাকাবাসির সাথে সাইফুল ইসলমের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দ্বন্দ্বের জেরে এলাকাবাসী সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি পরিবর্তন করে স্থানীয় আশরাফুল ইসলামকে সভাপতির দায়িত্ব দেন।
হাঁসমারি ফুরকানিয়া মাদরাসার বর্তমান সভাপতি আশরাফুল ইসলাম জানান, নানা অনিয়মের কারণে সাইফুল ইসলামকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফোরকানিয়া মাদরাসার ৮.৫ শতাংশ জমি ১৯৭০ সালের তারিখ দেখিয়ে হাঁসমারি সতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার নামে জাল দলিল প্রস্তুত করেন। সরকারি বালামে সাইফুলের দলিলের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাঁসমারি সতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার নামে করা দলিল বলে সাইফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটি দখলের চেষ্টা করেন চলতি বছরের ১৫ মার্চ। ওইদিন দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পড়ে সাইফুল ইসলামের পক্ষে স্থানীয় লুৎফর রহমানের ছেলে নয়ন পারভেজ বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আবদুস সালাম, জাহিদুল ইসলাম, আজিমুদ্দিন, আবদুল মান্নানসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
ফোরকানিয়া মাদরাসার শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রামের কবরস্থান, ঈদগাহ এবং মাদরাসার কমিটিতে থেকে ধর্মীয় এসব প্রতিষ্ঠানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছেন সাইফুল ইসলাম। সর্বশেষ মাদরাসার অর্থআত্মসাত, জমি দখলে নিতে জাল দলিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভক্ত করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাইফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে বিধি মোতাবেক ফোরকানিয়া ও এবতেদায়ি মাদরাসার সভাপতি পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তবে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বিধিমোতাবেক ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। নিয়োগ বানিজ্য বা জাল দলিলে প্রতিষ্ঠান দখলের প্রশ্নই ওঠে না।
বার্তাবাজার/এম আই