গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলনকে অন্য দিকে প্রভাবিত করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করবে। কিন্তু বিরোধী দলকে সেই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। শুক্রবার (৯ জুন) গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আয়োজিত যুব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে যুব অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।

নুরুল হক নুর বলেন, সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আবার পাস করুক। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবে সেই বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছাক তারা।

ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এর জন্য প্রয়োজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্ব শর্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ যদি সরকার মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের থেকে আরো ভালো পন্থা ও প্রক্রিয়া তারা তৈরি করবে, তাহলে অবশ্যই বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সেই প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিতে যেতে হবে। কিন্তু যাদের অন্তরে বাকশাল তারা কখনোই গণতন্ত্র দেবে না।

নুর বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে স্বৈরশাসকরা স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে যায়নি। শেখ হাসিনাও যাবে না। তাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিরোধী দলের আন্দোলনকে অন্য খাতে প্রভাবিত করতে, আন্দোলনের গতি নষ্ট করতে, আন্দোলনকে ভন্ডুল করতে ওরা (সরকার) হরেক রকমের টালবাহানা করবে। বিরোধী দলকে কোনো টালবাহানার ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আমার ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার শেখ হাসিনার নেই ৷ গত দুটি নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা সব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার ছিনতাই ও হরণ করেছে। এবার আমরা হয় তাদের জীবন নেব, না হয় নিজেদের জীবন দেব, কিন্তু ভোটের অধিকার ছেড়ে দেব না।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব আরও বলেন, গত ১৪ বছরে এই সরকার উন্নয়নের অনেক গল্প-গুজব করেছে। বাজেট দিলে তাদের যারা সুবিধাভোগী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আছে, তাদের দিয়ে বলায়, এটা (বাজেট) ব্যবসাবান্ধব। কিন্তু কয়েকদিন আগে একটি গণমাধ্যমে রিপোর্ট এসেছে, শেয়ার বাজারের ২০৪টি সেবা ও শিল্প খাতের ১১৯টি কোম্পানি বলছে, ব্যবসায় লালবাতি জ্বলছে, ব্যবসার অবস্থা ভালো না। শেয়ার বাজারের লুটেরারা আজকে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, সরকারের পলিসি মেকার।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে গত ১৪ বছরে ১২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এর প্রতিটি পয়সা পাচার করেছে আওয়ামী দুর্বৃত্ত ও বাকশালের সহযোগী আমলা, কামলা, এমপি, মন্ত্রীরা। বিরোধী দলের কেউ এক পয়সাও পাচার করেনি। শেখ হাসিনা যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকতেন, তাহলে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আরও বলেন, গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার সরকার শুধু বিরোধী মতকে নির্মূল করার জন্য ছয় শতাধিক মানুষকে গুম করেছে। সাড়ে তিন হাজার মানুষকে গুলি করে মেরে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়েছে। কোনো ভালো মানুষ, দেশপ্রেমিক, ধার্মিক জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ, বিবেকবান মানুষ ক্ষমতায় থাকার জন্য এভাবে গুম-খুন করবে? এবার আর রেহাই নেই। যদি মরতে হয়, দুই-চারটাকে নিয়েই মরব। এই দেশে আর একটি রক্ত আমরা ঝরতে দেব না। শেখ হাসিনার বাকশালকে আর একটি দিনও আমরা টিকতে দেব না।

তিনি আরো বলেন, আমরা নিজের জীবনের পরোয়া করি না। নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করি না। এখন চিন্তা একটিই, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানো, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং গত ১৪ বছরে যারা গুম-খুন করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। যারা আইনের মধ্যে থেকে কাজ করছেন তাদের কারো ক্ষতি হবে না। তাই পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা সৎ, সাহসী, দেশপ্রেমিক এবং দুঃশাসন বিরোধী তাদেরকে বলব, আপনারা একটু ঘুরে দাঁড়ান। তাহলে দেশ ও জনগণের ভাগ্য খুলবে, আপনাদেরও মঙ্গল হবে।

যুব অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ গণঅধিকার পরিষদ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বার্তাবাজার/এম আই