আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে একের পর এক হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় নির্ঘুম রাত কাটছে রাজধানীবাসীর। ডাকাত আতঙ্কে গত তিন দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা লাঠি হাতে সারারাত রাস্তায় পাহারায় দিতে নেমে পড়েছেন।

উত্তরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বসিলা, আদাবর, মিরপুর, জিগাতলা, গুলশান, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী এবং পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের রাতভর রাস্তায় পাহারা দিতে দেখা গেছে।

লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতি রাতেই এলাকায় টহল দিয়ে সকালে বাড়ি ফেরেন তারা।

জানা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপ খুলে সমন্বয় করে এলাকাভিত্তিক টহল টিম করে পাহারার কাজটি করছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক।

ডাকাতির বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাকাতির অভিযোগ জানিয়ে প্রতিবেশী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য চাইছেন।

গত বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে জানায়, বিভিন্ন বয়সের ডাকাত, যার বেশিরভাগই কিশোর এবং তরুণ, ছুরি ও দা হাতে বেশ কয়েকটি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে।

পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের খবর দেওয়া হলে তারা ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজনকে আটক করে।

মিরপুরের ইসিবি চত্বরে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় চারশ জন ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ডাকাতি করতে রাস্তায় নামে। রাত আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে স্থানীয়রা সাহায্যের জন্য সেনা সদস্যদের ফোন করলে তারা এসে কয়েকজনকে আটক করে।

পরে কয়েকজন স্থানীয় বলেন, ঘটনাটি ডাকাতি ছিল না, দুই গ্রুপের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তারাই অস্ত্র হাতে নামে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জের আটিবাজার, ওয়াশপুর, আরশিনগর, উত্তরা এলাকায় ডাকাতির তথ্য ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। রাতে মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, মোহাম্মদপুরের কয়েকটি এলাকায় সেনা সদস্যদের রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে।

পূর্ব শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া, মিরপুর, ভাসানটেকসহ অন্যান্য এলাকার মসজিদ থেকে ঘোষণা দিয়ে ডাকাতির বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

পূর্ব শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা শাহীন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে আমরা মসজিদ থেকে ডাকাতরা আশেপাশে ঢুকেছে এমন ঘোষণা শুনতে পাই। আমরা তখন লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।’

মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা নির্ঘুম রাত পার করছি। এ অবস্থা চলতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব শুরু করে জনগণকে নিরাপত্তা দিতে হবে।’

আরশিনগরের বাসিন্দা মো. ফয়সাল বলেন, এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে মসজিদ থেকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

মোহাম্মদপুরের এক বাসিন্দা জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিভিন্ন দিক থেকে ডাকাতরা এলাকায় প্রবেশ করলেও লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডাকাতদের তাড়িয়ে দেয়।

উত্তরার বাসিন্দারা জানান, গভীর রাতে ৭ নম্বর সেক্টরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরপর ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে মসজিদগুলো সবাইকে সতর্ক থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।

উত্তরার বাসিন্দা তাহমিদ ইসলাম জানান, তিনিসহ আরও অনেকে সারা রাত ওই এলাকায় টহল দিচ্ছেন।

এদিকে, ধানমন্ডিতে স্থানীয়দের একাধিক গাড়ি নিয়ে এলাকায় টহল দিতে এবং সন্দেহভাজনদের ধাওয়া করতে দেখা গেছে।

শিগগিরই থানাগুলো চালু না হলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে এখনো কাজে ফেরেনি পুলিশ সদস্যরা।

গত বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশের সকল থানার কার্যক্রম শুরু করা হবে।