জাপানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েও পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ জানাননি। কারণ, তিনি জানেন, অভিযোগ জানালেও পরে অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশটির আইনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসবেন। দেশটিতে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা, তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি সহজেই ছাড়া পেয়ে যান। এভাবে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বারবার ছাড়া পেয়ে যান।

 

কিন্তু এবার এ পরিস্থিতির পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। জাপানের পার্লামেন্ট দেশটির যৌন নিপীড়ন আইনের সংস্কারে যুগান্তকারী একটি বিল নিয়ে আলোচনা করছে। এটি সফল হলে গত এক শতাব্দীর মধ্যে এটি হবে এ আইনের দ্বিতীয় সংশোধন।

 

বিলে বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনটি হবে ধর্ষণের সংজ্ঞায়। আইনপ্রণেতারা ধর্ষণকে ‘জোর করে যৌন সংসর্গ’ থেকে ‘অসম্মতিমূলক যৌন সংসর্গ’-তে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছেন। বর্তমান জাপানি আইনে ধর্ষণকে ‘জোর করে’ ও ‘ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে’ বা একজন ব্যক্তির ‘অচেতন অবস্থা বা প্রতিরোধ করার অক্ষমতা’র সুযোগ নিয়ে সংঘটিত যৌন সংসর্গ বা অশালীন কাজ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

 

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের সঙ্গে এই আইন বিরোধপূর্ণ। অন্য দেশে বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সেখানে যেকোনো অসম্মতিমূলক যৌনতা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয়। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ‘না’ বলে, সেটা না হিসেবেই গণ্য হবে। এর ব্যত্যয় হলেই তা ধর্ষণ।

 

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, জাপানে ধর্ষণের সংকীর্ণ এই সংজ্ঞা ন্যায়বিচারের জন্য একটি বড় বাধা। এ কারণেই ধর্ষণের শিকার নারীরা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকেন।
২০১৪ সালে টোকিওর এক মামলায় দেখা গেছে, এক ব্যক্তি ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে প্রতিরোধ সত্ত্বেও জোর করে ধর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল। কারণ, আদালত রায়ে বলেছিলেন, ওই ব্যক্তি যে আচরণ করেছেন তাতে ওই কিশোরীর আরও প্রতিরোধ করা কঠিন ছিল না। এ ছাড়া মামলায় ওই কিশোরীকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কারণ, জাপানে যৌন সংসর্গে সম্মতি দেওয়ার সক্ষমতার বয়স মাত্র ১৩ বছর, যা বিশ্বের ধনী গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।

 

মূলত এসব কারণেই জাপানের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী সহপাঠীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েও পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। ওই শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁরা দুজন একসঙ্গে বসে টিভি দেখছিলেন। এ সময় তাঁর সহপাঠী যৌন নিপীড়ন শুরু করেন। তিনি ‘না’ বলেছিলেন। কাজ হয়নি। এরপর দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে প্রতিরোধ করা ছেড়ে দেন তিনি। এরপর তিনি ধর্ষণের শিকার হন।

 

অধিকারকর্মীদের মতে, যেহেতু ওই শিক্ষার্থী একসময় প্রতিরোধ করা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাই এই অভিযোগ বর্তমান আইনের আওতায় পড়ে না। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীরা তদন্তের সময় পুলিশ বা হাসপাতাল কর্মীদের কাছে যে আচরণের শিকার হন, তাতে বলা যায় তাঁরা ‘দ্বিতীয়বার ধর্ষণের’ শিকার হন।

 

ই.এক্স/ও.আর/বার্তা বাজার