শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, মাদ্রাসাশিক্ষা নিয়ে যেসব সমস্যা আছে, তা চাপিয়ে দিয়ে নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনারকক্ষে ‘সকল মাদ্রাসার শিক্ষা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

 

সভায় মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয়ের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, চাপিয়ে দিয়ে কিছু হয় না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। আর যেগুলো আইন বিরুদ্ধ, যেমন শারীরিক নির্যাতন, এটি কিন্তু আইনবিরুদ্ধই। সর্বোচ্চ আদালত থেকেও রায় দেওয়া হয়েছে এবং সরকারের ওপর নির্দেশনা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীকে শারীরিক-মানসিক কোনো রকমের শাস্তি দেওয়া যাবে না।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আলিয়া মাদ্রাসায় ধর্মীয় বিষয় পড়ানো হয়। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় যা পড়ানো হয়, শিক্ষার্থীরা তা–ও পড়েন। কওমি মাদ্রাসাতেও ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে যদি সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারতেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো।

 

আলোচনা সভায় জাতীয় শিক্ষানীতি পুনঃ পর্যালোচনার কথা বলেন দীপু মনি। তিনি বলেন ‘২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। শিক্ষানীতির অনেক বিষয় বাস্তবায়ন করছি। আবার অনেক কিছু আছে, সেটি এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। সেই শিক্ষানীতিরও ১২ বছর হয়ে গেল। আমরা সেটাও নতুন করে পুনঃ পর্যালোচনার চেষ্টা করছি।’

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সহসভাপতি এবং ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসা তো রাষ্ট্রের মধ্যেই। তাই রাষ্ট্র চাইলেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মাদ্রাসা বোর্ডের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও কীভাবে দেশের জনশক্তি, সম্পদ হয়ে উঠতে পারে, এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।

মাদ্রাসাশিক্ষাকে যুগোপযোগী করে শিক্ষার্থীদের দেশের দক্ষ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেন নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী।

 

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘একটি ছেলের বিজ্ঞানী হওয়ার শখ, কিন্তু সে কওমি মাদ্রাসায় পড়ে বলে বিজ্ঞানী হতে পারবে না। এ রকম হতাশামাখা অনেকগুলো মেইল আমার কাছে এসেছে। মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা উচিত। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারকে অবশ্যই অবহিত হতে হবে। মাদ্রাসাশিক্ষা নেওয়ার পর তারা জনশক্তি হিসেবে তৈরি হয় না। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা আনন্দময় করার পাশাপাশি মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে যেন তারা দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে।’

 

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও লেখক মাওলানা হাসান রফিক। তিনি বলেন, প্রতিবছর কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (কওমি মাদ্রাসাশিক্ষার স্নাতকোত্তর) শেষ করে ২৬ হাজার আলেম বের হচ্ছেন। পড়ালেখা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে পদার্পণের উপযুক্ত হচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের কর্মক্ষেত্র কী?

 

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা এয়াকুব বাদশা, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও কওমি মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র ফরহাদ হোসেন।

 

ই.এক্স/ও.আর/বার্তা বাজার