কোন কারণ ছারাই শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে কাচা সড়কের উপরে নির্মিত নতুন কালভার্ট ভেঙে ফেলেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে করে ওই কালভার্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী শিশু, বয়স্ক, স্কুল ও কলেজর শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ সহ কয়েক গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে।
বর্ষার পানিতে ভাঙা স্থানটি তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল করতে না পেরে গ্রামবাসী মিলে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে।
জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড গাজী কান্দী থেকে সরকার কান্দী পর্যন্ত ত্রান ও দুর্যোগ ব্যাবস্থা অধিদপ্তরের আওতায় ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে দুই কিলোমিটার কাচা সড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই সড়কের দুই পাশে রয়েছে ফসলি জমি। পানি নিষ্কাশনের জন্য কাচা সড়কে মাঝে দুইটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি কালভার্ট নির্মান করতে দেড় লক্ষ টাকা করে খরচ হয়। একটি কালভার্টে পানি নিষ্কাশন কম হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা ও ডিএমখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন হক আবু বেপারী স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন গাজীকে ভেঙে নিয়ে যেতে বলে। চেয়ারম্যান স্থানীয়দের বলে কালভার্ট ভেঙে ভরাট করে রাস্তা তৈরি করবে কিন্তু ভাঙার পর আর সেই গর্ত যায়গা ভরাট করেনি। ভেঙে পুরনো ইট নিয়ে যায় কিন্তু আর ভরাট করা হয় না।
গাজী কান্দী, সরকার কান্দী,হাজী কান্দী গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তা একটি। এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করে স্কুলকলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু ওই রাস্তার ওপর নির্মিত কালভার্টটি ভেঙ্গে ফেলায় সেখানে বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেলে গ্রামবাসী মিলে সাঁকো তৈরি করে। সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এখন তাদের। এতে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে রাস্তাটি ব্যবহারকারীদের মাঝে।
দুর্ভোগ লাঘবে কালভার্টটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কালভার্ট নির্মাণ হলে এলাকাবাসীর চলাচলে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘জসিম মাদবর যখন চেয়ারম্যান ছিল সে আমাদের এখানে চলাচলের জন্য সুন্দর একটি কালভার্ট করে দিয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান আবু বেপারী নতুন রাস্তার কথা বলে কালভার্টি ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। ভাঙ্গার সময় বলে দ্রুত এটা ঠিক করে দিব। কিন্তু সাত মাস হয়েছে এখনো আমাদের কালভার্ট ও রাস্তা কোমটাই ঠিক হয়নি। তাঁরা ভেকু দিয়ে বিলের মাঝে খাল কেটে চলে যায়। আমরা তাদেরকে বললাম আমাদের কালভার্ট ও রাস্তা ঠিক করবেন না? তাঁরা বলে আমাদের বাজেট শেষ আর কোন কাজ হবে না। এখন আমরা কয়েকটি গ্রামের মানুষ মিলে চলাচলের জন্য একটা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাফেরা করি। এই দেখেন এখানে কালভার্টের স্লাব গুলো পরে আছে। আর ইট গুলো মহিউদ্দিন গাজী নিয়ে গেছে’।
ভুক্তভোগী মো: রিপন মিয়া বলেন,’জসিম মাদবর চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই ওয়ার্ডে সাবেক মেম্বার শরাফ উদ্দিন ভাই কে দিয়ে রাস্তা করিয়ে দেয়। বিলের পানি সরানোর জন্য এখানে একটি মজবুত কালভার্ট তৈরি করে। যার ফলে এ রাস্তা ও কালভার্ট দিয়ে আমরা শান্তি মতো চলাচল করতে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে দেখি ভেকু দিয়ে কালভার্টি ভেঙ্গে ফেলে। দীর্ঘ সাত মাস পার হয়ে গেলেও কালভার্টি আর সংস্কার করেনি। কালভার্টি না থাকায় আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক তাঁর গরু,ছাগল, ফসল নিয়ে চলাচল করতে পারছে না। ছোট ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতেও অসুবিধা হচ্ছে ।
আমরা এ ভোগান্তি হতে মুক্তি চাই ‘।
৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শরাফ উদ্দিন ঢালী কে বলেন, ‘আমি মেম্বার থাকা অবস্থায়, গাজী কান্দি ও মাদবর কান্দি এলাকার মানুষের সর্বস্তরের মানুষের অনুরোধে গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ননওয়েজের বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে এই কালভার্টি তৈরি করে দেই। সেদিন ঐ এলাকার কিছু লোকজন এসে বললো মেম্বার আমাদের কালভার্ট ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন আমাদের চলাচলের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তখন আমি তাদেরকে বলি আপনারা আপাতত একটা সাঁকো দিয়ে নেন। সাঁকো তৈরিতে খরচ যা হবে আমি দিয়ে দিব’।
মহিউদ্দিন গাজী বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি কালভার্টের ইট গুলো বাড়িতে আনছি। এগুলো আনতে আমার যে বদলি খরচ হয়েছে, ইটের দাম তার চেয়েও কম। এখানে আমার কোন দোষ নেই’।
কালভার্টি ভেঙ্গে ফেলার বিষয়ে ডিএমখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন হক আবু বেপারী মুঠোফোনে বলেন , ‘ কালভার্ট ভাঙ্গার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি কেন কালভার্ট ভাংতে যাবো। তবে গতকাল আমি গাজীপুর গিয়েছিলাম তখন কিছু লোক এসে বললো আমাদের এখানে রাস্তা কাটা হয়েছে তাই এখন চলাচলে সমস্যা হয়। এ কথা শুনে তাদের বললাম আপনারা একটা সাঁকো তৈরি করে চলাচল করেন। আমি খোকা বেপারির কাছে ১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিব ‘।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি মাত্র আপনাদের কাছেই শুনলাম।তাছাড়া এ নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।যাইহোক এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ‘।