ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড চাপড়বাড়ি দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিডিএস) নামের একটি এনজিও ঋণ দেয়ার কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে।

গত ২১ জুলাই বিডিএস নামের কথিত ওই এনজিও কার্যালয়ে গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে অফিসটি তালাবন্ধ দেখেন। এরপরই তারা বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে প্রায় পাঁচ শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সেখানে অবস্থান নেন।

স্থানীয়রা জানান, জুলাই মাসেরই ১৩ তারিখ পৌরসভার এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ জালালের একটি বাড়িতে অফিস ভাড়া নেন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি কর্মী পরিচয় দেওয়া কয়েকজন লোক।

প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত কিছু দিন ধরে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’ নামের একটি ভুয়া এনজিওর কয়েকজন মাঠকর্মী ঋণ দেয়ার নামে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রচারণা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রাম গুলো হলো : মেদুয়ারী, ভরাডোবা, পুরুড়া, পূর্ব ভালুকা, গোয়ারী, ভাটগাঁও, মামারিশপুর, ধামশুর, মল্লিকবাড়ি, চাপড়বাড়ি সহ প্রায় ১০টি গ্রাম।

জানা যায়, ভূয়া এনজিওটি গত ১ সপ্তাহ ধরে ফিসারি খামারি, গরু খামারি, ছাগলের খামারি, মুরগির খামারি, চাকরীজীবি, অটোরিকশা চালক, চা ‘র দোকানদার সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কাছে ঋণ দিবে বলে আমানত নিয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা।

প্রতারণার শিকার পুরুড়া গ্রামের শরীফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মানুষের কাছ থেকে ধার করে ২০ হাজার করে জমা দিয়েছিলাম ঋণের আশায়। ভেবেছিলাম গরু কিনব। পরিশ্রম করে আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করব। কিন্তু মিষ্টি কথায় এমন সর্বনাশ হবে ভাবতেও পারিনি।

মামারিশপুর এলাকার বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন বলেন, তিনিও ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর মতো আরও পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

এই বিষয়ে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন ভালুকা উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান খান জুয়েল জানান, ভুক্তভোগীরা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানায় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করি। প্রশাসনকে জানানোর কারণে মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে।

ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দ জানান, বিডিএস নামের এনজিও ঋণ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সেই সঙ্গে প্রতারকদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করবে।

ঘটনার বিষয়ে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলীনূর খান জানান, লোভে পড়ে কিছু মানুষ অনিবন্ধিত এনজিওতে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। যেকোনো এনজিও নতুন ভাবে কাজ শুরু করলে সর্ব প্রথমে আমাকে জানানোর কথা। সব এনজিও গুলো আমার মনিটরিং এ থাকে। কিন্তু এই এনজিওটি আমাকে কোনো কিছুই অবগত করে নি। ঘটনাটি শুনার সাথে সাথেই আমি ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলি এবং উক্ত স্থান পরিদর্শন করি। আমরা চেষ্টা করছি চক্রটিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য।