সীমিত পরিসরে মঙ্গলবার রাতে চালু হয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। তবে টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময়ে তাদের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, সতর্কতা ও পূর্বাভাস ছিল অনুমাননির্ভর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশের রাডারগুলো থেকে নেওয়া যায়নি তথ্য। বিশ্বের কোনো আবহাওয়া মডেলও দেখা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকৃতির আচরণ দেখে অনুমান করে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আকাশের অবস্থা, বাতাস পরিস্থিতি আর সাগরের ঢেউ দেখে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যেসব সংস্থা আবহাওয়ার তথ্য মেনে পরিচালিত হয়, তারা বিপাকে পড়ে। তবে মঙ্গলবার রাতে ইন্টারনেট চালু হওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ফিরেছে আগের রূপে। আধুনিক সব প্রযুক্তি কাজে লাগানো যাচ্ছে। অবশ্য গতকাল রাত ১০টার দিকেও আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট আপডেট হয়নি। সেখানে রয়েছে ১৭ জুলাইয়ের পূর্বাভাস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পাঁচটি রাডার আছে। এসব রাডারের মাধ্যমে আবহাওয়ার সঠিক গতিবিধি নিরূপণ ও বার্তা প্রদান করা হয়। ইন্টারনেট ছাড়া এসব রাডার অচল ছিল। আবহাওয়ার পরিমণ্ডল পর্যবেক্ষণ, পূর্বাভাস, সামুদ্রিক ঝড়ের অবস্থান, তীব্রতা, গতিবিধি, কুয়াশা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিরূপণ, প্রতিদিনের আবহাওয়াসহ সতর্কীকরণ সংকেত প্রদান করা হয়েছে অনুমানের ভিত্তিতে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জাপান, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী চিত্রমালা সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করা হতো। কিন্তু গত পাঁচ দিন পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগের মতো ওয়েবসাইট, মেইলে তথ্য দেওয়া যায়নি। টেলিফোনে যারা জানতে চেয়েছেন, তাদের অনুমাননির্ভর তথ্যই দেওয়া হয়।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ পারভীন বলেন, এ সময়ে সাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ তৈরি হয়। ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ থাকে। ফলে ঘন ঘন পূর্বাভাস দিতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় সম্ভব হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, এমন পরিস্থিতি কখনও হয়নি। ইন্টারেনেট না থাকায় আবহাওয়ার বিশ্লেষণ এবং বার্তা প্রদানে হিমশিম খেতে হয়েছে। কালবৈশাখীর আগাম তথ্য পেতে ৫০০ কিলোমিটার দূরের মেঘমালা পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু তা করা যায়নি। তবে এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আবার আগের অবস্থায় ফিরেছি। সব প্রযুক্তি ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে, সঠিকভাবে সব দেওয়া যাবে। আমরা গত কয়েক দিনের আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশে গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবক’টি সমুদ্রবন্দরে এখনও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ। লঘুচাপটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা অববাহিকায় ঢুকে পড়েছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা বিভাগে ভারী বৃষ্টি বুধবারও অব্যাহত থাকবে। এর পর থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে মাসের বাকি সময়জুড়ে সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হবে, যা বর্ষাকালে খুবই স্বাভাবিক।