আপনজনকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, কেনাকাটা বা অন্য যে কোনো বিল পরিশোধের জন্য এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত এমএফএস সেবা। এ ব্যবস্থায় প্রতিমাসে গড়ে দেড় লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ব্যাংক বন্ধ থাকার এ সময়ে এমএফএস সেবা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে গত শুক্রবার থেকে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহক। আজ থেকে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্তের ফলে পরিস্থিতি উন্নতির আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ২২ কোটি ৬৫ লাখের বেশি। গত এপ্রিলে এ মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। আগের মাস মার্চে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। কেননা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অ্যাপের মাধ্যমে এখন ব্যাংক থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ। কারও এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও অনেক ধরনের বিল ইন্টারনেট ছাড়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। অনেক এজেন্ট পয়েন্ট থেকে ক্যাশ ইন বা ক্যাশ আউট করা যাচ্ছে না। এমএফএস হিসাব থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ‘সার্ভিস নট অ্যাভেইলেবল’ লেখা আসছে। আর যাদের এমএফএস হিসাবে ব্যালান্স নেই, ক্যাশ টাকা নিয়ে এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে ক্যাশ ইন করতে পারছে না। সব মিলিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, অন্য সব অ্যাপের মতো বিকাশ অ্যাপও ইন্টারনেটনির্ভর পরিপূর্ণ ডিজিটাল সেবা। চলমান পরিস্থিতিতে সারাদেশে ইন্টারনেট না থাকায় বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা কোনো ধরনের সেবা নিতে পারছেন না। তবে বিকাশের ইউএসএসডি চ্যানেল *২৪৭# চালু রয়েছে। গ্রাহকরা সেন্ডমানি, মোবাইল রিচার্জ, ক্যাশ আউটের মতো কিছু সেবা নিতে পারছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যাদের এমএফএস হিসাবে টাকা আছে তারা এখনও হয়তো আংশিক সেবা পাচ্ছেন। তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সেবা নিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আবার অনেকেই এখন অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে অভ্যস্ত হওয়ায় ম্যানুয়ালি সেবা নিতে সমস্যায় পড়ছেন। এমএফএস সেবার বিষয়টি অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত। এমএফএস পরিপূর্ণভাবে সচল রাখার জন্য ব্যাংক খোলা থাকতে হবে। আবার ইন্টারনেট ও টেলিফোন অপারেট সেবা সচল থাকা, এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর পয়েন্ট সচল থাকা আবশ্যক। এর কোনো একটি পর্যায়ে সমস্যা হলেই সেবা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এখন এসব পর্যায়ে সমস্যা হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক এলাকায় দোকান বন্ধ রয়েছে। আবার কারফিউর কারণে নির্ধারিত সময়ের বাইরে দোকান খুলতে পারছেন না। সব মিলিয়ে সেবা পেতে ভোগান্তি চলছে।
গ্রাহকদের এমএফএস অ্যাকাউন্টে যে টাকা থাকে তা ই-মানি হিসেবে বিবেচিত। কোনো একটি এমএফএস কোম্পানি চাইলেই ই-মানি ইস্যু করতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠান কেবল গ্রাহকের জমা সমপরিমাণ ই-মানি বা পেমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে পারে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে কোনো একটি ব্যাংকে খুলতে হয় ‘ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট (টিসিএসএ)’। প্রতিদিন লেনদেন শেষে এই হিসাবে জমা এবং ই-মানি ইস্যুর হিসাব মেলাতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান এর বেশি ইস্যু করলে তা জাল হিসেবে বিবেচিত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত তিন দিন ছিল সাধারণ ছুটি। আজ কারফিউ শিথিলের মধ্যে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কিছু শাখা খোলা রেখে সেবা দিতে পারবে। সাধারণত সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির দিন অ্যাপ, এমএফএস, এটিএম বুথসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের চাপ বেশি থাকে। গত বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত কার্যত লেনদেন প্রায় বন্ধ ছিল। কেননা গত বুধবার সরকারি ছুটির পর বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে বেশির ভাগ শাখা ছিল প্রায় ফাঁকা। শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর রবি, সোম ও মঙ্গলবার সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে আর্থিক লেনদেন ব্যাপক বাধার মুখে পড়েছে।