কোমলমিত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে সারাদেশে ধ্বংস যজ্ঞ চালায় দূর্বৃত্তরা। এসময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এর বিভিন্ন স্থাপনা হামলা চালানো হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় এবং সেবা দানে ব্যবহূত অন্তত ৪৯টি গাড়ি এবং ১৭ টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এছাড়াও সড়কের মিডিয়ান, সড়কবাতি, আঞ্চলিক অফিস ভাঙচুর করে।

বর্জ্যসহ অন্যান্য সেবার কাজে ব্যবহূত যান-বাহনের ৪ ভাগের এক ভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এতে প্রায় ২০৫ কেটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।
গতকাল সোমবার বিকালে গুলশানে নগরভবন মিলনায়তনে চলমান সহিংসতায় ডিএনসিসির বিভিন্ন অফিস, যানবাহন ও অন্যান্য স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

ক্ষতি কাটিয়ে স্বাভাবিক সেবায় ফেরার বিষয়ে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘আমাদের জাপানিজ গাড়িগুলো (কম্প্যাক্টর) আনতে নূন্যতম ১৪ মাস সময় লাগে।

কারণ এগুলো অর্ডার করলে তারা বানিয়ে দেয়। আর ভারত থেকে আনলেও এক বছর সময় লাগবে। তাই এটি আমাদের জন্য অত্যান্ত চ্যালেঞ্জ। আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে এগুলো অন্যভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়।
কারণ নগরকে প্রতিদিন পরিস্কার করতে হবে। মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লা পড়ে আছে। একটি কম্প্যাক্টর দিয়ে ৪ থেকে ৬টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়ির ময়লা সরানোর কাজ করে। আমার হিসেবে প্রতিদিন অন্তত ৪০০ টন ময়লা সরানো সক্ষমতা আমরা হারিয়েছি।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সড়কবাতির অনেক ক্ষতি হয়েছে।

৫০টি লাইটের জন্য একটি ডিপি (কন্ট্রোলার) থাকে সেগুলোও চুরি হয়েছে। অনেকগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ৫৮টি ডিপি বক্স চুরি এবং ভেঙ্গে ফেলার তথ্য পেয়েছি। যার একটি বক্সের দাম প্রায় ২০ লাখ টাকা। এতো কিছুর পরও আগামী শনিবারের মধ্যে আমাদের বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন এবং আলোকিত নগরবাসীদের দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘অত্যান্ত দু:খের সাথে বলতে চাই, ওেপতে থাকা একটি রাজনৈতিক অপশক্তি দীর্ঘ দিন ধরে এই দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে মরিয়া। আগে নির্বাচন আসলেই তারা অগ্নি সন্ত্রাসে লিপ্ত হতো। দেশের জান-মালের ব্যপক ক্ষতি স্বাধন করতো। কত শত মানুষ তারা পুড়িয়ে মেরেছে। এবার জামাত বিএনপির সন্ত্রাসীরা ধ্বংস যজ্ঞ চালানোর জন্য বেছে নিয়েছে এই দেশের কোমলমিত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আমি শোক ও দু:খ প্রকাশ করছি সেই সব শিক্ষার্থীর প্রতি যারা জামাত-বিএনপির রাজনৈতিক কূটচালে শাহাদাত্ বরণ করেছেন।’ মেয়র বলেন, ‘আমাদের সেবা দানের ৪ ভাগের এক ভাগ যান-বাহন বিএনপি জামাতের ক্যাডাররা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের কাজ ব্যহত হচ্ছে। এরপরও আমরা কর্মঘন্টা বাড়িয়ে নগরবাসীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রামপুরায় হাতিরঝিলের পানি সরানোর পাম্প জালিয়ে দেয়া হয়েছে। যেটি দ্রুত ঠিক করতে না পারলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় পড়তে হবে নগরবাসিকে। তাই দ্রুত সেটি ঠিক করতে হবে। ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশন সেনবাহীনির সহায়তায় সেটি ঠিক করার কাজ শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশনের অনেক কর্মী দূর্বৃত্তদের গুলি এবং মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমাদের ড্রাইভাররা গাড়ি বাঁচাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন। যারা আমাদের উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পদ নষ্ট করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি। একই সাথে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জনগণের টাকায় কেনা সম্পদ যারা নষ্ট করেছে আইন শৃঙ্খলাবাহীনি তাদের দ্রুত চিহূিত করে আইনের আওতায় এনে জনসম্মুক্ষে বিচার করার দাবি জানাচ্ছি। ক্ষতির বিষয়ে আমরা একটি ৫ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমাদের কি কি ক্ষতি হয়েছে সেটি জানিয়েছি।’

মেয়র বলেন, ‘ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশন রাস্তার মধ্যে থাকা ইট-পাটকেল পরিস্কারের কাজ শুরু করেছি। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে সড়ক পরিপূর্ণ পরিস্কার করে ফেলা হবে। আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সময় দিচ্ছেন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এটি করা সম্ভব হচ্ছে। আমি সবাইকে আহব্বান করবো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখান থেকে যাতে আমরা সবাই মিলে ঘুরে দাঁড়াতে পারি।’

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জানান, অঞ্চল-১ আনুমানিক ক্ষতি ৩ কোটি লাখ টাকা, অঞ্চল-৩ এ ১ কোটি ২৫ লাখ, অঞ্চল-৪ এ ১২০ কোটি, অঞ্চল ৬ এ ৩ কোটি ১০ লাখ, অঞ্চল-৬ এ ৭ লাখ। ৬ অঞ্চলে প্রায় ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রোড মিডিয়ানে ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি, মিরপুর-১০ ফুটওভার ব্রীজ ৭ লাখ, শহীদ আবরার ফুটওভার ব্রীজ এক্সকেলেটর ১০ কোটি, স্মার্ট এলইডি লাইট স্থাপনায় ৩৫ কোটিসহ সড়কের মিডিয়ানে লাগানো অসংখ্য গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রাথমিক ক্ষয়-ক্ষতির মোট পরিমান ২০৫ কোটি টাকা।

দূর্বৃত্তরা ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এ সবচেয়ে বেশি ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। এই অঞ্চলে ২৯টি গাড়ি (কম্প্যাক্টর-৪টি, কনটেইনার কেরিয়ার ১০টি, ওপেন ট্রাক ১১টি, হাইড্রোলিক ল্যাডার ৩টি, মাইক্রোবাস ১টি) সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ১৭টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় (কম্প্যাক্টর ৩টি, কনটেইনার কেরিয়ার ৫টি, খোলা ট্রাক ৫টি, মাইক্রোবাস ১টি পাজেরো জীপ ১টি, ডাবল কেবিন পিকআপ ২টি)। এসব গাড়ির মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়কবাতির মেরামতের কাজে নিয়োজিত ২৯টি গাড়ি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেনা জরুরি।