কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে দিনাজপুর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ, শহর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। এ সময় ৭টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয় তারা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টিস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, কালিতলা থানা মোড়, প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক, মর্ডাণ মোড়, জেল রোড, জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে, লিলিমোড়, বাহাদুরবাজার ও পাহাড়পুর এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ।
এর আগে সকাল ১১টায় দিনাজপুর জিলা স্কুলের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে লিলিমোড় হয়ে চারুবাবুর মোড়ের দিকে আসে। একই সময়ে পাশে বাসুনিয়াপট্টিতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা চলছিল। এতে সাধারণ ছাত্র ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষটি পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সাধারণ ছাত্ররা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বাসুনিয়াপট্টিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছেড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা চলে যায়।
এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা জেলা, শহর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে ৭টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পুরো শহরে সংঘর্ষ এড়াতে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অর্ধশত আহত হয়েছে।
দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মিহির কুমার রায় বলেন, সংঘর্ষে আহত ১৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, এই হাসপাতালে সংঘর্ষে আহত ১৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে আগে থেকে তথ্য ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঢুকবে। আন্দোলনকারীরা অনেক বেশি থাকায় পুলিশের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তারা দ্রুত আওয়ামী লীগের অফিস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভায়। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এক আন্দোলনকারীকে মারধর করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।