গত ০৬ জুন ২০২৪ তারিখ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারী চাকুরীতে কোটা সংস্কারের দাবীতে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ৬ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে কোটা সংস্কার ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শিল্পনগরী খুলনার তিনটি পয়েন্টে মহাসড়ক অবরোধ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে মহানগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে বিএল কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে বেলা ১১ টার দিকে শিববাড়ি মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা এবং রূপসা সড়ক অবরোধ করে নর্দান ইউনিভার্সিটি, খুলনা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এর শিক্ষার্থীরা নগরীর প্রবেশপথ জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল। এসময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালযয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বি এল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমাবেশ লক্ষ্য করা গেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অপমানজনক আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে জিরো পয়েন্ট মুখরিত করে রাখে। এসময়- ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, ’কোটা দিয়ে বৈষম্য নয়, বৈষম্যমুক্ত দেশ চাই’, ’আমার সোনার বাংলায় কোটা প্রথার ঠাঁই নাযই’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, শিক্ষার্থীদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে,‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি শ্লোগানে জিরো পয়েন্ট এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।

এদিকে, বুধবার দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছেলেদের বিকাল ৫ টার ভিতরে এবং মেয়েদের আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল দশটার ভিতরে হল খালি করতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে, কোটা সংস্কারের দাবীতে সারাদেশে নিহত ছয়জনের স্মরণে খুলনায় গায়েবানা জানাযা নামাজ আদায় করেছে খুলনা বিএনপি। বুধবার দুপুরে নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান ও সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, আবু হোসেন বাবু, মনিরুজ্জামান মন্টু, শফিকুল ইসলাম হোসেন, কাজী মাহমুদ আলী, মাসুদ পারভেজ বাবু, আবদুর রাজ্জাক, নাজমুল হুদা সাগর, ইবাদুল হক রুবায়েত, নেহিমুল ইসলাম নেহিম, আবদুল আজিজ সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকে সামনে রেখে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহম্মেদ ইস্তিসহ ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে দলটির নেতারা। আটক অন্যরা হলেন- ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সোহেল বাসার, ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হাওলাদার, যোগীপোল ইউনিয়ন যুবদল নেতা রাজু হোসেন রানা, ছাত্রদল কর্মী জিল্লুর রহমান ও দৌলতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সেলিম মল্লিক।

এপ্রসঙ্গে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা জানান, নেতাকর্মীরা সবাই জামিনে ছিলেন। কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এটা ছাত্রদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা বলেন তিনি।

তবে সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন খান জানান, পুরাতন একটি মামলায় পরোয়ানা থাকায় ইস্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।