চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলছে। আপনারা জানেন গতকালও বিভিন্ন স্থানে মারামারি হয়েছে। আজও নিউজে দেখলাম ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীরা একইস্থানে প্রোগ্রাম দিয়েছে। মোটামুটি দেখা যাচ্ছে মারামারি অবধারিত। এই পর্যায়ে একজন এমপি হিসেবে আমার কিছু কথা বলা দরকার।
তিনি বলেন, প্রথমেই আমি বলতে চাই— সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কোটা সংস্কারের কথা বলেছেন। যারা আন্দোলন করছেন তাঁরাও কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার চান। দুইজনের চাওয়া একই। তারপরেও এত আন্দোলন কেন হচ্ছে? হতে দুইজন দুইজনের প্রতি বিশ্বস্ততা কম। অথবা দুইজন দুইজনকে বুঝে উঠতে পারছেন না।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যারা প্রথমে আন্দোলন শুরু করছিলেন তাদের আন্দোলনকে আমরা যৌক্তিক মনে করছি। যখন এই আন্দোলনে রাজাকার স্লোগান চলে আসল, যখন সরকার বিরোধী-দেশ বিরোধী কিছু মানুষ আন্দোলনে জড়িয়ে গেছে তখন তো আর সরকার বসে থাকতে পারে না। তখন মনে হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন রেখে সরকার বিরোধী আন্দোলন মনে হচ্ছে; সরকার তাই মনে করছে। আমার তাই মনে হলো।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের সঙ্গে আরেকটি পক্ষ্য যুক্ত হয়েছে। এটা প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। আমরা যদি আদালতকে না মানি তবে নতুন একটি কনস্টিটিউশনাল ক্রাইসিসে (সাংবিধানিক সংকট) পড়ে যাবো।
যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রতি দাবি জানিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি বলছি না আপনাদের দাবি অযৌক্তিক। আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের প্রতি আমার দাবি— আপনাদের এই দাবি আদায়ের প্রক্রিয়াটা আদালত পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করা যায় কিনা। আদালত এক মাসের মধ্যে এইটার সমাধান দিবেন বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই কিন্তু কোটা বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করেছিলেন। আমার বিশ্বাস আবার একটি যৌক্তিক সমাধান দিতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। ছাত্রলীগকে কিভাবে অজনপ্রিয় করা যায় তার একটি চক্রান্ত চলছে। কারণ, আপনি যখন দুটি দলকে মুখোমুখি করবেন, ছাত্রলীগ যদি কাউকে বাড়ি দেয় বা বাড়ি খায় তখন এটি আরো খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাবে। ছাত্রলীগকে অজনপ্রিয় করার একটা প্রক্রিয়া চলছে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বড় ভাই হিসেবে আপনাদের বলছি, আপনারা আদালতের দিকে একটু দেখেন। এক মাস পরে যদি আপনাদের মনে হয়, না এটা যৌক্তিক সমাধান হয়নি, তাহলে আপনারা আবারও আন্দোলন করতে পারেন। আপনাদের পুরো ভবিষ্যৎটা সামনে, আমি চাই না অযথা মুখোমুখি হয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক এবং এই রাষ্ট্রে বা দেশে একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হোক। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারকে কঠিন হাতে আগাতে হবে। সরকারের সামনে আর পথ থাকবে না।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি আপনাদেরকে দাবি জানাচ্ছি, আপনারা এক মাসের জন্য এপিলেট ডিভিশনের রেজাল্ট হওয়া পর্যন্ত এটাকে (আন্দোলন) স্থগিত করেন এর ভেতরে আমরা, আপনারা যদি চান আমরা আপনাদেরকে সাথে করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসব।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা, উনাকে বললে উনি বুঝবেন না এমন কোনো জিনিস নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি উনার কাছাকাছি থেকে সাক্ষী দিচ্ছি, উনাকে যদি বুঝিয়ে বলা যায়, উনি বোঝেন না এমন কোনো জিনিস নাই। তবে যে প্রক্রিয়ায় আপনারা দাবি আদায় করতে চাচ্ছেন এই প্রক্রিয়াটা আপনাদের সঠিক না। আপনাদের কাছে আমার দাবি, একটা মাস সময় আপনারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
সুমন বলেন, ‘আপনারা বলতে চাচ্ছেন, আপনাদের আন্দোলন সরকারের সঙ্গে আদালতের সঙ্গে না। কিন্তু আপনারা যা চান তা যদি আদালত থেকে আসে তাহলে তো আন্দোলন করার দরকার পড়ে না। মানলাম যে আপনারা আদালত চাচ্ছেন না কিন্তু আদালতের মাধ্যমেও আসতে পারে। প্রয়োজনে আমি আদালতে আইনজীবী হিসেবে থেকে বিষয়টি যৌক্তিক সমাধানের চেষ্টা আমি করব।’