সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধের দুই পক্ষ সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্টেড ফোর্সের আরএসএফ আরও ৭ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আগামী ৪ মে থেকে শুরু হবে এই যুদ্ধবিরতি, চলবে ১১ মে পর্যন্ত।
মঙ্গলবার সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী সালভা কির বিবৃতিতে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শান্তি সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে সেনা বাহিনী ও আরএসএফের সংঘাত নিরসনে কাজ করতে চায়। এই সংলাপ আয়োজন, দূত বাছাইয়ের জন্য খানিকটা সময় লাগবে। সেনা বাহিনী ও আরএসএফ নেতারা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে আগামী ৪ মে থেকে ৭ দিন যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করবেন।’
তবে লড়াইয়ের বিবাদমান দুই পক্ষ সেনাবাহিনী ও আরএসএফ থেকে এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে কোনো বিবৃতি বা মন্তব্য আসেনি।
বর্তমানে অবশ্য যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আছে দু’পক্ষ। গত ১ মে ৭২ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল সেনাবাহিনী-আরএসএফ। মঙ্গলবার তা আরও বাড়ানো হলো।
ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয় সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে। যুদ্ধে ইতোমধ্যে হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া ও দক্ষিণ সুদানে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ১ লাখ মানুষ। যুদ্ধ যদি আরও দীর্ঘায়ীত হয়, সেক্ষেত্রে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এর আগেও তিন বার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল সেনাবাহিনী ও আরএসএফ। তবে সেসবের মেয়াদ ছিল ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা। সেসব যুদ্ধবিরতি ঠিক মতো মেনেও চলেনি দু’পক্ষ। এই প্রথম এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলো সেনাবাহিনী ও আরএসএফ।
২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির, যিনি প্রায় ৩ দশক দেশের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছিলেন। সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেতৃত্বে ঘটেছিল এ অভ্যুত্থান।
বশিরকে উৎখাতের পর ‘সভরিন কাউন্সিল’ (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি পরিষদ দেশটি পরিচালনা করে আসছে। সেই পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি জেনারেল হেমেদি নামেই বেশি পরিচিত।
আরএসএফ-কে মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ১০ বছর বিলম্ব চায় সেনাবাহিনী। অন্যদিকে, আরএসএফ দুই বছরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করে।
সুদানে বেসামরিক শাসনে ফেরার প্রস্তাবিত পদক্ষেপের মূলে আছে আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার এ বিষয়টি। কিন্তু এর সময়সূচি নিয়ে দু,পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরেই শুরু হয়েছে সংঘাত।