আওয়ামী লীগের প্রাক্তন মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও পিরোজপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করীম থানায় ফোন করে বলে দেওয়ার পরে চেক জালিয়াতির মামলায় ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ছাত্র ইউনিয়নের সদ্য সাবেক সভাপতি দীপক শীলকে গ্রেপ্তারের পরে থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দীপক শীলের ছোট ভাই রুপক শীল।
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী দীপক শীলের ছোট ভাই রুপক শীল গণমাধ্যমকে এতথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার আসামী দীপক শীলকে গ্রেপ্তারের পরে আদালতে প্রেরণ না করে ওইদিন রাতে তাকে ছেড়ে দিয়েছে পিরোজপুরের পুলিশ।
দীপক শীল পিরোজপুর সদর থানার চলিশা এলাকার পূর্ব চুঙ্গাপাশা গ্রামের শ্রী নরেন্দ্রনাথ শীলের ছেলে ও দেশের প্রাচীন বাম ছাত্র গণসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সদ্য সাবেক সভাপতি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর-১ আসন থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের গত মেয়াদেও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন শ ম রেজাউল করীম। অপরদিকে দেশের প্রাচীনতম বাম ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সদ্য সাবেক সভাপতি দীপক শীল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজপথে বিরোধিতা করে আসছেন। কিন্তু সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা দীপক শীল চেক জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরে শ ম রেজাউল করীমের ফোনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দীপক শীলের ছোট ভাই রুপক শীলের এমন তথ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও আইন অঙ্গনসহ অন্যান্যরা।
তবে দীপক শীলকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পিরোজপুর পুলিশের একেক কর্মকর্তা একেক ধরণের কথা বলছেন। অতিরিক্ত সুপার (সদর সার্কেল), সদর থানার ওসি ও ডিবি পুলিশের একজন পরিদর্শক বলছেন নাম ঠিকানার সঙ্গে মিল না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ সুপার বলছেন দীপক শীল নামে ওয়ারেন্টভূক্ত কোনো আসামী বা সন্দেহভাজন কাউকে আটকও করেনি পুলিশ।
সাইফুল ইসলাম নামে একজন শরীয়তপুরের আদালতে দীপক শীলের নামে চেক জালিয়াতির এই মামলাটি দায়ের করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমার পূর্ব পরিচিত পিরোজপুরের সংবাদ কর্মী ইমন চৌধুরী আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলেন, তোমার দায়ের করা মামলায় দীপক শীলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন পিরোজপুর সদর থানায় রয়েছেন। তোমার টাকা ফেরত দিলে দীপক শীলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করবে কি না? তখন আমি তাকে জানাই এটা এখন সম্পূর্ণ আইনের বিষয়। আমি পুলিশকে কিছু বলতে পারব না। এর পরদিন সকালে (শুক্রবার) আমি পরিচয় দিয়ে পিরোজপুর সদর থানার ওসি শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাই, দীপক শীলকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আমাকে জানান, নাম ঠিকানার সঙ্গে মিল না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কোথায় মিল নেই, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ডিবির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমি ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করীম রাজিবের সঙ্গে কথা বলার পরে তিনি আমাকে জানান, যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি দাবী করেছেন তার নাম দীপক পাল। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ঢাকায় থাকায় তিনি জাতীয় পরিচয় পত্র দেখাতে পারেননি। পরে তার মুখের কথা বিশ্বাস করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তি এলাকায় থাকেন না বলে স্থানীয় চৌকিদার তাকে চিহ্নিত করতে পারেননি। এরপর বিষয়টি জানার জন্য আমি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সদর থানার ওসির বরাত দিয়ে বলেন, নাম ঠিকানার সঙ্গে মিল না থাকায় তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুরো বিষয়টি আমি পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলামকে জানালে তিনি আমাকে বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে সকল থানায় খবর নেই ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীসহ অন্যান্য কাউকে আটক করা হয়েছে কি না? পিরোজপুরে বৃহস্পতিবার দীপক শীল নামে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান তিনি। পুলিশের এমন কথা বার্তায় আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমার মনে হয়েছে, কোথাও কোনো দুর্নীতি হয়েছে। পুরো ঘটনার অডিও কল রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে, আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে আদালতকে বিষয়টি জানাব। অন্যথায় প্রতারক দীপক শীলকে আইনের আওতায় এনে আমার টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়।
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য দীপক শীলের মোবাইলে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, আগে আমি আপনার সম্পর্কে তথ্য নেব, তারপর কথা বলব। এই কথা বলে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে দীপক শীলের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেলে তার ছোট ভাই রুপক শীলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ডিবি পুলিশ এসে একটি মিথ্যা চেক জালিয়াতির মামলায় দীপক শীল দাদাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তাকে সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এসময় পুলিশ কারও কোনো কথা শুনতেছিল না। পরবর্তীতে রেজাউল ভাই ফোন করে বলে দেওয়ার পরে তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। রেজাউল ভাই বলতে কোন রেজাউলের কথা বলছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে রুপক শীল বলেন, রেজাউল ভাই মানে এমপি রেজাউল ভাই। এখন দীপক দাদায় বাসায় রয়েছেন, তিনি সুস্থ্যও রয়েছেন। আমি একটু বাইরে আছি বলে জানান রুপক শীল।
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি বার্তা বাজার’কে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের লিস্ট বিভিন্ন দপ্তরে আমাকে পাঠাতে হয়। ওয়ারেন্টের আসামীকে গ্রেপ্তার করা হলে তাকে ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। এধরণের কোনো ঘটনা ঘটার কথাই না।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করীমকে তার মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি বার্তা বাজার’কে জানান, সম্মেলন চলতেছে, এরমধ্যে আমি কী কথা বলব? কখন ফ্রি হবেন, জানতে চাইলে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।