কারাগারে ফাঁসির কয়েদি ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের রাখার কথা কনডেম সেল কিংবা সাধারণ সেলে। কিন্তু চট্টগ্রাম কারাগারে এমন বন্দিদের রাখা হয়েছে সাধারণ ওয়ার্ডে। সেলের পরিবর্তে ভয়ংকর অপরাধীরা ওয়ার্ডে থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে কারা অভ্যন্তরে।

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও ফাঁসির আসামিদের কারাগারে সুরক্ষিত ও নিরাপদ ব্যবস্থায় রাখার জন্য ৭৯টি সেল রয়েছে। কিন্তু এখন জঙ্গিসহ ভয়ংকর বন্দি ৭৭৬ জন। সেল সংকটের কারণে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম কারাগারে সেলের ভেতর গভীর রাতে ইতোপূর্বে এক বন্দি অন্য বন্দিকে খুন করায় এবং সম্প্রতি বগুড়ায় কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে চার ফাঁসির আসামি পালিয়ে যাওয়ায় (পরে ধরা পড়েছে) বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দিন দিন দুর্ধর্ষ বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। অতীতে দুর্ধর্ষ আসামিরা সাধারণ ওয়ার্ডে থাকায় সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে মিশে নানা ইস্যুতে উস্কানি দিয়ে কারাগারে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। নিজেরা এবং সাধারণ বন্দিদের দিয়ে মাদক আনাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছে।
জেলার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এই কারাগারে আগে থেকেই সেলের তুলনায় দুর্ধর্ষ বন্দি বেশি ছিল। এর মধ্যে বান্দরবান থেকে কয়েক দফায় শতাধিক কেএনএফ সদস্যকে নিয়ে আসায় বন্দিদের রাখতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কয়েকটি সাধারণ ওয়ার্ডে দুর্ধর্ষ বন্দিদের রাখতে হচ্ছে। নতুন করে আরও শতাধিক সেল তৈরি না হলে সংকট বাড়বে।

সাবেক কারা পরিদর্শক আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে সব সময় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দুই-তিন গুণ সাধারণ বন্দি থাকে। কারাগার নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে দুর্ধর্ষ বন্দিদের বিধি অনুযায়ী সেলে রাখা হয়। কিন্তু প্রতি বছর এমন বন্দি বাড়ছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নতুন সেল ভবন তৈরি করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ বান্দরবার জেলা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩১ জন কেএনএফ সদস্যকে স্থানান্তর করা হয়। তাদের একটি সেল ভবনে রাখা হয়েছে। সেখানে থাকা ফাঁসির আসামিসহ শতাধিক ভয়ংকর বন্দিকে অন্য ভবনের দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। এই কারাগারে এখন জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগের সামরিক কমান্ডার সাজাপ্রাপ্ত জাবেদ ইকবাল, শহীদ হামজা ব্রিগেডের সামরিক কমান্ডার মনিরুজ্জামান ডনসহ জেএমবি, নব্য জেএমবি, হামজা ব্রিগেড, আনসার উল্ল্যাহ বাংলা টিম, হুজি, শারক্বীয়ার ৮৫ জঙ্গি আছে। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির কয়েদি ১৭৫ জন, আমৃত্যু কারাদণ্ডিত ২২ জন এবং ৩৩৮ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ ও কেএনএর ১০৮ জন রয়েছে। এদের মধ্যে দুর্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে নাছির ও তার ভাই মো. মহিউদ্দিন, শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়া, যুবলীগের রিটু দাশ, জেএমবির বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন, আলাউদ্দিন ওরফে রুবেল, নাইমুজ্জামান ওরফে জাফর, আবদুল মালেক ওরফে লাল্টুসহ শতাধিক সন্ত্রাসী বন্দি রয়েছে।

এই কারাগারে জঙ্গি, ফাঁসির কয়েদি, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের রাখতে পুরুষদের জন্য ৭৪টি সেল ও নারীর জন্য ৫টি সেল রয়েছে। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা দুই হাজার ২৪৯। বর্তমানে সাড়ে চার হাজার বন্দি রয়েছে।