দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অনুসন্ধান ও তদন্ত অনেকটাই যেন ধীরে চলো নীতিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দীর্ঘ বছর। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় অনীহার কারনে দুর্নীতির সাথে জড়িত দুর্নীতিগ্রস্ত রাঘববোয়ালরা অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি হইতে জুন মাসে মাত্র সাতটি মামলা এবং ছয়টি অভিযোগপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ খুলনা দুদক কার্যালয়। এই সকল মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩১ জন নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী। উল্লেখ্য গত ২০২২ সালে খুলনায় দশটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পেয়েছিল দূদক খুলনা কার্যালয়। এই সকল প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার বিনিময়ে কতিপয় ঠিকাদারদের কে প্রকৌশলী দরপত্রের মূল্য আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। এই সকল প্রকল্পের মধ্যে খুলনা শিশু হাসপাতাল প্রকল্প, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ও সিসিইউ, ৫০ বেডের আইসোলেশন টেন্ডার প্রকল্প, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন, জেলা সমাজসেবা প্রকল্প, সহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার সহ ওজোপাডিকোর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন, খুলনার প্রভাবশালী কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান যেন শেষই হচ্ছে না।

ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে রূপালী ব্যাংকের প্রায় ১১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মেসার্স বায়োনিক সি ফুড এক্সপোর্ট লিমিটেড, মেসার্স প্রিয়াম ফিশ এক্সপোর্ট লিমিটেডসহ চার কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় গত বছরের জুলাইয়ে। প্রায় এক বছরেও সেই অনুসন্ধান শেষ হয়নি। উল্লেখ্য কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বর্তমানে লবনচোরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক, তৈমুর হোসেন ও মোংলা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী এস কে শওকত আলীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক।

২০২২ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি আইনজীবীদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

দুদক খুলনা কার্যালয়ের আলোচিত তদন্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খুলনা জেলা পরিষদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পিবিআই এর সাবেক কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকীর মামলা, খুলনা রেলস্টেশনের সাবেক স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক হিসাব রক্ষক গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, খুলনা প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১০ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির মামলা, একই ব্যাংকের ২১ কোটি ৭০ লাখ ৩১ হাজার টাকার মামলা, কর অফিস খুলনার তিন কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ মামলা, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ কোটি ৬ লাখ টাকার আত্মসাত মামলা, গণপূর্ত অধিদপ্তর বিভাগ ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান ও কতিপয় প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট এর অভিযোগ। উল্লেখ্য ২০২২ সালের জুন মাসে দুদক খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে রহস্যজনক আগুনে তৃতীয় তলার ছয়টি কক্ষের সকল গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, মামলার নথি ও আসবাবপত্র পুড়ে গিয়েছিল।