প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘দুর্নীতি দুর্নীতিই, সেই দুর্নীতি হোক পিয়নের বা আমার। সব দুর্নীতি দূর হোক। দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির এক পর্যায়ে একথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
জানা যায়, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০০৭ সালে দুদকের করা মামলায় তিতাস গ্যাসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সরকার ও টেকনিশিয়ান আবদুর রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। রায়ে দুই আসামিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডিতরা। শুনানির পর সে আপিল মঞ্জুর করে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায় বাতিলের এই রায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা নির্মূলে অভিমত ব্যক্ত করার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় সংসদকে একগুচ্ছ পরামর্শও দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়াও দুদকের জন্য একটি স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস গঠন করে তার মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগ করার পারামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নিয়োগ বোর্ড গঠনের পরামর্শ দেন উচ্চ আদালত। এছাড়া নিয়োগের পর কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে কমিশনের চেয়ারম্যান এবং হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থেকে সদস্য নির্বাচন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে আলাদা প্রসিকিউশন প্যানেল গঠনের পরামর্শ দিয়ে রায়ে বলা হয়, তিন বছর পর পর এসব প্যানেল পুনর্গঠন করতে হবে এবং আইনজীবীদের উপযুক্ত সম্মানী ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘জাতীয় সংসদ পরামর্শগুলো গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।’ পরে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করে দুদক। চেম্বার আদালতে এ আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত করেন।
বৃহস্পতিবার সেই স্থগিতাদেশ বহাল রেখে দুদককে আপিলের অনুমতি দিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
শুনানিতে আইনজীবী কাজল বলেন, ‘হাইকোর্ট দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের স্বার্থেই এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা (আদালত) সংসদকে পরামর্শ দিতে যাব কেন? আমরা কি সংসদকে পরামর্শ দিতে পারি? হাইকোর্ট নির্বাহী বিভাগকে, সরকারকে নির্দেশনা দিতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাইলে সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সেই পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, আবার নাও পারেন।’
এসময় প্রধান বিচারপতি কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়েও কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আপনারা তো সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতা। দেশের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে। যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাদেরকে বোঝান, পরামর্শ দিন। তারা (আন্দোলনকারীরা) নির্বাহী বিভাগের (সরকারের) কথা বলছেন। নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত তো চ্যালেঞ্জ করা যায়। চ্যালেঞ্জ হলে তো বিষয়টি আবার আদালতের সামনেই আসবে। আদালতকেই নিষ্পত্তি করতে হবে। তারা যথাযথভাবে তাদের বক্তব্য আদালতেই উপস্থাপন করতে পারেন। আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।