পিএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার মানুষের কাছে ‘দানশীল’ হিসেবে পরিচিত। এলাকায় গড়েছেন মসজিদ, গরুর খামার ও বাগান। নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে তৈরি করেছেন পোস্টার।
ডাসার উপজেলার পূর্ব বোতলা গ্রামের দিনমজুর মৃত আবদুর রহমান মীরের মেঝ ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী। স্থানীয়দের তিনি বলতেন, রিয়েল স্টেটসহ অনেক ব্যবসা রয়েছে তার। নিজে একজন শিল্পপতি।
কোটিপতি বনে যাওয়া আবেদ আলী দুই-তিন বছর আগে হঠাৎ এলাকায় এসে দান করা শুরু করে। অন্যদের দান করলেও নিজের ভাইদের কিছুই দেননি তিনি। তার বড় ভাই এখনো দিনমজুর এবং ছোট ভাই অটোরিকশার চালক।
আবেদ আলী এলাকায় মায়ের জমিতে নির্মাণ করেছেন মসজিদ। মসজিদের পাশেই নির্মাণাধীন ২ কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ শেষ পর্যায়ে। কমলাপুর বাজারের পাশে সরকারি জমি দখল করে কোটি টাকার গরুর খামার করার কাজ শুরু করেছেন। পাশের গ্রামে ১ কোটি টাকা দিয়ে খামার করার জন্য কিনেছেন ৬০ শতাংশ জমি।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনায় আসা আবেদ আলী সম্পর্কে স্থানীয় যুবক মামুন মাতুব্বর বলেন, ‘১০-১৫ বছর আগেও দেখেছি আবেদ আলীদের পরিবার অনেক গরিব ছিল। আমি শুনেছি, সে একটা চাকরি করত। অনেককে আবার সে চাকরিও দিয়েছে। চাকরির কথা বলে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে। দুদক এই বিষয়টা তদন্ত করলে অনেক কিছু বেড়িয়ে আসবে। আগে আমার বাবা দাদাদের সঙ্গে সে কৃষি কাজ করছে। রাতারাতি এত বড়লোক কীভাবে হয়ে গেল, বিষয়টা বুঝতে পারছি না।’
পূর্ব কমলাপুরের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আবেদ আলী খুবই ভালো মানুষ। আগে সচিবলায় চাকরি করত। বর্তমানে ব্যবসা করে। সামাজিক লোক। মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আবেদ আলী জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। ঢাকার কারওরান বাজারে নাকি কাঁচা মালও টানছে। বর্তমানে তার এই সমাজে ভালো নাম-ডাক। এলাকার মানুষদের যেকোনো বিপদ-আপদে সাহায্য করে। দুই দিন ধরে ফেসবুকে দেখছি আর মানুষের কাছে শুনছি, সে নাকি পিএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত, এ ছাড়া তার অনেক দুর্নীতি আছে। এলাকার মানুষকে সাহায্য করলেও নিজের ভাইদের কোনো সাহায্য করে না আবেদ আলী। সে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মানুষকে সাহায্য করছে।’
এলাকাবাসী জানায়,ছোটবেলায় আবেদ আলীর পরিবারের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। দুই বেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারত না তার পরিবারের সদস্যরা। অভাবের কারণে আবেদ আলী ৫-৬ বছর বয়সেই ঢাকা চলে যান। এরপরে আবেদ কুলির করেছেন, রিকশা চালানোসহ শ্রমিকের কাজ করেছেন। পরবর্তীতে চালক হিসেবে চাকরি করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতেন। আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁস ও অবৈধ সম্পদের কথা শুনে তারা অবাক।
আবেদ আলীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হলেও ভাগ্য ফেরেনি ভাইদের। এমনকি ভাইদের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেন না তিনি। বড় ভাই জাবেদ আলী এখনো দিনমজুরের কাজ করেন। এই কাজ করে ধারদেনা করে এক ছেলেকে ইতালি পাঠিয়েছেন। ছোট ভাই ছাবেদ আলী অটোরিকশার চালক। মোঝ ভাই আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে গেলেন দুই ভাই ও তাদের পরিবার।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা আবেদ আলীকে নিয়ে খোঁজ-খবর শুরু করেছি বিভিন্ন দপ্তরে। তার বৈধ কোনো সম্পদ আছে কি না এবং সেগুলোর সঠিকভাবে ক্রয় ও কর দেওয়া হয়েছে কি না, তার খবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আদালত থেকে যদি তার বিষয়ে কোনো আদেশ আসে, তাহলে আমরা তা নিয়ম অনুযায়ী বাস্তবায়ন করব।’
সূত্র: আমাদের সময়