প্রতিদ্বন্দ্বী দুই সামরিক বাহিনীর চলমান লড়াইয়ের কারণে সুদান থেকে ৮ লাখ মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে পারেন বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও উভয় বাহিনীর সংঘাত তীব্র হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রায় পৌনে এক লাখ মানুষ দেশটি ছেড়ে পালিয়েছেন বলে সোমবার জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত ১৫ এপ্রিল সুদানের সেনাবাহিনীর সাথে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মাঝে সংঘাত শুরু হয়। ১৬ দিন ধরে চলমান এই সংঘাতে কয়েকশ মানুষ নিহত ও আরও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
দেশটিতে এই সংকট মানবিক বিপর্যয়ের সূচনা করেছে। রাজধানী খার্তুমের বিভিন্ন অংশ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মাঝে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি ও দারফুর অঞ্চলে পুনরায় সংঘাত উসকে দিয়েছে।
সেনাপ্রধান ও আরএসএফ প্রধানের ক্ষমতার লড়াইয়ে অনেকেই প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে নেওয়া এই দুই বাহিনীর প্রধানের মাঝে বেসামরিক শাসনব্যবস্থার দিকে পরিকল্পিত রূপান্তর নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
রোববার উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৭২ ঘণ্টার জন্য বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছিল। যদিও এর আগেও দফায় দফায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও রাজধানীতে দুই বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা পাল্টা-হামলা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, সুদানের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বাহিনী যুদ্ধবিরতির আলোচনা সৌদি আরবে করতে পারে। তারপরও সোমবার খার্তুম এবং এর পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে বিমান হামলা ও গোলাবারুদ নিক্ষেপ অব্যাহত ছিল।
সুদান থেকে ৮ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এসব মানুষের মাঝে সুদানের নাগরিক আছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৬০ লাখ।
জাতিসংঘের কর্মকর্তা রউফ মাজোও বলেছেন, ইতোমধ্যে ৭৩ হাজার মানুষ সুদান ছেড়ে পালিয়েছেন।
অন্যদিকে মিসর বলেছে, চলমান সংঘাতের কারণে ৪০ হাজারের বেশি সুদানি নাগরিক সীমান্ত অতক্রিম করে মিসরে ঢুকে পড়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা লোকজন বলেছেন, সুদানের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেকেই চাদ, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া অথবা লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবে গেছেন।
সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সামরিক সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৯৯ জন। জাতিসংঘও সুদানে হতাহতের ব্যাপারে প্রায় একই ধরনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি।