মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগেই আসামিকে কারাগারের কনডেম (ফাঁসির সেল) সেলে রাখা যাবে না- হাইকোর্টের এমন রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচ্ছিন্ন এই সেলের চিত্র উঠে এসেছে। রায় দেওয়া দুই বিচারপতি রায়ের কয়েক মাস আগে দুটি কারাগার পরিদর্শন করে ফাঁসির সেল নিয়ে তাদের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ রায়ে তুলে ধরেছেন। এতে কনডেম সেলে থাকা আসামিদের বিচ্ছিন্ন ও আবদ্ধ অবস্থাকে হাইকোর্ট অমানবিক ও নিষ্ঠুর বলে উল্লেখ বলেছেন।

একই সঙ্গে এ ধরনের বিচ্ছিন্নতায় আসামির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কেমন হয় সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে। প্রায় দুই মাস আগে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া ৬৫ পৃষ্টার রায়ের অনুলিপি গত ২ জুলাই প্রকাশিত হয়।

কনডেম সেলের বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে থাকা তিন ব্যক্তির পক্ষে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ এর ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট এর বৈধতা নিয়ে রুল দেন। রুল নিস্পত্তি করে গত ১৩ মে এ রায় হয়। এতে বলা হয়, কনডেম সেলে কোনো আসামিকে রাখা দুইবার সাজার সামিল। আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে দুই বছরের সময় দিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আসামিদের ফাঁসির সেল থেকে সাধারণ সেলে রাখতে হবে। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে দণ্ডিত কোনো আসামি যদি সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং তাকে অন্যদের সঙ্গে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে।

রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেন, কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগ এবং রিভিউয়ের (রায় পুনর্বিবেচনা) পরও বহাল থাকলে এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নাকচ হয়ে গেলেই কেবল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে হবে এবং তখন থেকে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ওই বিশেষ সেলে রাখা যাবে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্টের রায়টি ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের একটি অংশে বলা হয়েছে, শুনানির অংশ হিসাবে আমরা দুজন (বিচারপতি) দেশের দুটি কারাগার পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। গত ১৬ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং ২৭ জানুয়ারি ফরিদপুরে জেলা কারাগার পরিদর্শন করি। হাইকোর্ট বলেন, ‘এর মধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলের অবস্থা কিছুটা উন্নতমানের হলেও ফরিদপুর কারাগারের কনডেম সেলের অবস্থা শোচনীয় ও অমানবিক। আমাদের মনে হয়েছে, বিচ্ছিন্নতার (আসামির) ক্ষেত্রে উভয় কনডেম সেলই একই রকম অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং খুবই অপমানজনক। এ ধরনের বিচ্ছিন্নতায় আবদ্ধদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা কেমন হয় তা সহজেই বোঝা যায়।’