ঢাকার সাভার উপজেলায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৩ এর উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার (৭ জুন) সকালে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে এবং সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাস্তবায়নে নানা আয়োজনে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদযাপিত হয়। জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

‘মজবুত হলে পুষ্টির ভিত, স্মার্ট বাংলাদেশ হবে নিশ্চিত’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বুধবার সকালে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‍্যালিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সংলগ্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে সাধার মানুষের মাঝে পুষ্টি সপ্তাহের সচেতনতা তুলে ধরে। র‍্যালিতে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা সহ হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, কনসালটেন্ট ও স্টাফগণ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে গর্ভবতী এবং দুগ্ধ দানকারী মা ও প্রবীনদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহ নিরাপদ খাদ্য ও সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা সভা সম্পন্ন হয়। জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা করেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা।

এ সময় তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সঠিক পুষ্টির অভাবে কম ওজনের, খর্বকায় এবং কম উচ্চতাসম্পন্ন শিশুর জন্ম হার বেড়েছে। মূলত দারিদ্যের কারণেই শিশুদের মধ্যে ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, ফোলিক এসিডের ঘাটতি বেশ স্পষ্ট। এমন অবস্থায় সব মানুষ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য অপরিহার্য। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ।

তিনি আরও বলেন, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ এ্যান্ড নিউট্রিশনের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৩৬ শতাংশ মানুষ স্ট্যান্টিং (উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন) নিয়ে বেড়ে উঠছে। সম্প্রতি স্ট্যান্টিং কমলেও তা কাঙ্খিত মাত্রায় কমছে না। দ্রুত পুষ্টির ঘাটতি কমিয়ে স্ট্যান্টিং কমিয়ে আনতে না পারলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য অনুযায়ী ২৭ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

ডা. হুদা জানান, জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৩ এ মোট ৭টি বার্তা দেশব্যাপী প্রচার করা হবে। সেগুলো হলো,জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো, শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ এবং ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি সুষম খাবার দেয়া, শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না জানতে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করা, কিশোর-কিশোরীদের ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করা, গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়া এবং নিয়মানুযায়ী আয়রন-ফোলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ানো, পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের পুষ্টি চাহিদার প্রতি নজর দেয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি।

তিনি বলেন, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর, আউটডোর সহ বিভিন্ন জায়গায় জনসচেতনতা বাড়াতে পুষ্টি ট্রে রেখেছি। এই ট্রেতে আমরা বিভিন্ন শাক-সবজী , ফল যেগুলো কমদামে এবং খুব সহজে নিম্ন আয়ের মানুষও খেতে পারে সেগুলো রাখা হয়েছে। সকল পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাবার এক জায়গায় রাখার মাধ্যমে যে কেউ চোখে দেখলেই বুঝতে পারবে যে এইসব খাবার খেলে তাদের পুষ্টি ফিল আপ হবে। আমরা খুব সহজ ভাষায় পুষ্টি ট্রের মাধ্যমে সেটা প্রদর্শন করছি এবং এভাবে সকলকে নিয়মিত কাউন্সেলিং আমাদের অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মো: সাইদুল ইসলাম, গাইনি কনসালটেন্ট ডা. জয়নব আক্তার, এমওডিসি ডা. আরমান আহমেদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো: মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখসহ আরো অনেকেই ।

বার্তাবাজার/রাআ