পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত চারপাশ। গাছে গাছে ভিড় করছে কাঠবিড়ালি ও পাখ-পাখালি দল। গাছগুলোতে সারি সারি কাঁঠাল দেখে থমকে দাঁড়ায় পথিক। প্রতিটি কাঁঠাল গাছে ঝুলে রয়েছে ছোট বড় শত শত কাঁঠাল। এসময় কাঠালের মিষ্টি রসে চিড়া,মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার জাতীয় ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি দাম পেয়ে খুশী চাষি। তাদের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাঁসি।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েকটি উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিক কাঁঠাল বাগান বেশ কয়টি বাগান রয়েছে। বাড়ির আঙিনা,পতিত জমি ও রাস্তার দুই পাশের জমিতে কাঁঠালগাছ রয়েছে হাজার হাজার। এসব গাছে প্রতিবছর প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদন হয়। প্রতিটি গাছের গোঁড়া থেকে শুরু করে পাতাল পযর্ন্ত শোভা পাচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল। জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকাসহ সাড়া দেশে সরবরাহ করেন গাছ মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর, আখাউড়া, কসবা উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় পাহাড়ি টিলা ভূমি সমৃদ্ধ লাল মাটিতে এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ বছর ১২ কোটি ৩২ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ ও কৃষক-ব্যবসায়ীদের। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও কৃষকরা বাগানের সঠিক পরিচর্চা করায় এই বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালো দাম পেয়ে খুশি বাগান মালিকরা। অন্যদিকে, কাঁঠালের দাম হাতের নাগালে থাকায় স্বস্থিতে ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী লাল মাটি সমৃদ্ধ উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলাতে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর, কালাছড়া, ছতুড়রপুর, পাহাড়পুর, মেরাসানি, আউলিয়া বাজার,চানপুর, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল, কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর, বায়েক, মন্দবাগ, কায়েমপুর এবং আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমুদাবাদ, রাজাপুর ও আদমপুরের বাগানগুলোতে গাছে ঝুলছে ছোট-বড় কাঁঠাল। রোগমুক্ত হওয়ায় পরিপক্ষ অবস্থায় বাগান থেকে কাঁঠাল সরাসরি বাজারজাত করা হচ্ছে।
কৃষক-বাগান মালিকরা জানান, প্রতি ১০০টি কাঁঠাল ৫০০০-৭৫০০ টাকা দরে বাগান থেকেই বিক্রি হচ্ছে। এতে ভালো লাভ হচ্ছে। বাগান মালিক জাকির হোসেন বলেন, প্রতিদিনই ১০০-২০০ কাঁঠাল কাটা হচ্ছে। কাঁঠাল নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসেন। আবুল খায়ের নামে আরেক বাগান মালিক বলেন, মাস দেড়েক আগে থেকে কাঁঠাল বেচাকেনা শুরু হয়েছে। চলবে আরো প্রায় দেড় থেকে দুই মাস।
ক্রেতারা জানান, লাল পাহাড়ি মাটির কাঁঠালের জুড়ি নেই।লাল মাটিতে চাষ করা কাঠাল গুলো বেশ মিষ্টি ও সু স্বাদু হওয়ায় দামও হাতের নাগালে আছে। বিক্রেতারা জানান, চাহিদা থাকায় বিক্রিও হচ্ছে ভালো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, এ অঞ্চলে প্রতিবছর কাঁঠালের আবাদ বাড়ছে। মাটির গুণাগুণ ভাল হওয়ায় চলতি বছর জেলায় ৮৫৭ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়েছে। এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ লক্ষ ৫০ হাজার পিস । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া বাজারে কাঁঠালের চাহিদাও বেশি। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্তত ১২ কোটি ৩২ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা সম্ভব হবে।