কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে প্রবেশের পর হত্যার পরিকল্পনা বুঝতে পারেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চান। তখন আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী তাকে পেছন থেকে মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরেন। এতেই অচেতন হয়ে পড়েন আনোয়ারুল আজীম আনার।

খাগড়াছড়ি পাহাড় থেকে গ্রেপ্তার ফয়সাল আলী সাহাজী (৩৭) ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের (৩৪) রিমান্ড আবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এর আগে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এর আগে গ্রেপ্তার এবং আদালতে সোপর্দ হওয়া আসামি শিমুল ভূইয়া ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দি পর্যালোচনা ও তদন্তকালে জানা যায়, এমপি আনারকে অপহরণপূর্বক হত্যায় ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূইয়ার কিলিং মিশনের সহযোগী হিসেবে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরের সংশ্লিষ্টতা ছিল (ভাড়াটে খুনি হিসেবে)। ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদকে নিয়েই শিমুল ভূইয়া কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করেন।

তদন্তকালে আরও জানা যায়, শিমুল ভূইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীন পরিকল্পনা মোতাবেক ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অংকের অর্থ দেবেন বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখেন। তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০মে এবং ফয়সাল ১২মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বাসায় ওঠেন। এমপি আনার ১২মে কলকাতায় যান এবং ১৩ মে অন্য আসামিদের প্রলোভনে আসামি ফয়সাল ও শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে সঞ্জীবা গার্ডেনের বাসায় যান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিমুল ভূইয়ার নির্দেশে ফয়সাল, মোস্তাফিজ, জিহাদ এমপি আনারকে হত্যার কার্যক্রম শুরু করেন। বিষয়টি আনার বুঝতে পেরে ফ্ল্যাট থেকে চলে যেতে চাইলে আসামি ফয়সাল তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরেন এবং মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরেন।

এরপর মোস্তাফিজ ও শিমুল ভূইয়াদের যোগসাজশে আনারকে হত্যা করে। হত্যা করার পর তার লাশ গুম করতে শিমুল ভূইয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশে আনারের দেহকে কেটে হাড় থেকে মাংস আলাদা করা হয় এবং লাশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়।

আনারকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ থেকে কলকাতার নিউটাউনের বাসায় নেওয়া ও হত্যা করে লাশ গুম করা পর্যন্ত ঘাতক ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূইয়া, ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন। আনারকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত হলে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের নাম পরিচয় ও চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। তদন্তকালে হত্যাকাণ্ডে আসামি ফয়সালও মোস্তাফিজুরকে খুঁজে বের করা এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হয়। ডিবির ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে যে, আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থান করছেন। এর ভিত্তিতে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গত ২৬ জুন আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমতাবস্থায় অস্ত্র মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার, উল্লিখিত আসামিরা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে আর কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা-যাচাই, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মোটিভ অনুসন্ধান এবং অজ্ঞাতনামা পরিকল্পনাকারীদের শনাক্তকরণে দুজনকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

গতকাল বুধবার দুপুর থেকে হেলিকপ্টারে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদের মধ্যে চারজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেননি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৬ জুন কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।