‘বেশি করে আলু খান ভাতের ওপরে চাপ কমান’ কথাটি নিশ্চিয় মনে আছে আপনাদের। থাকারই কথা! বেশি দিন আগের কথায় নয়, দেশের বাজারে চালের দাম ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হয়েছিল। তখন মানুষও সত্যি সত্যি আলুতে ঝুঁকে ছিলেন।

আলু বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। সারা বছরই বাজারে এর দেখা মেলে। এই দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই আলু সবজি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় সবজিটি আবার কোনও কোনও দেশের প্রধান খাবারও। লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর জাতীয় খাবার আলু। পেরুবাসী প্রতি বছর মাথাপিছু ৭০ কেজি আলু খায়। যা বিশ্বের অন্য যেকোন দেশের চেয়ে বেশি।

আলুর দাম কম থাকায় কয়েক বছর আগে বেশি করে আলু খেতে বলা হতো । কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। কেননা ১৫-২০ টাকার আলু এখন ঠেকেছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। বাজার মূল্যে কেজি প্রতি চালের চেয়ে এখন আলুর দাম বেশি। তাই গরিবের পাতে সচরাচর উঠছে না আলু। প্রশ্ন উঠতে পারে মানুষ এখন কোনটা খাবে? কিংবা আলুর বদলে কী খাবে?

বৃহষ্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে ৭০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহেও ৬০ – ৬৫ টাকার মধ্যে ছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর আলুর যে সংকট সেটা সবাই জানে, তাই দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা সম্ভব না।

বর্তমানে দেশের বাজারে ৪৮ টাকা থেকে ৭৮ টাকা দরে বিভিন্ন মানের চাল পাওয়া যায়। মোটা চালের মান অনুযায়ী ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি মানের চিকন চাল ৫২ থেকে ৫৮ টাকা এবং সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৮ টাকায়। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

দেশের একমাত্র নিত্যপণ্য বিপণনকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে চালের যে দাম- তার চেয়ে আলুর দাম বেশি। কারণ একটাই, দু-তিন বছর আগেও সরকার আলুর বাড়তি উৎপাদনের যে তৃপ্তিতে ছিল, সেখানে বাধা পড়েছে। গত মৌসুমে আলুর উৎপাদনও কমেছে। যে কারণে হু হু করে বাড়ছে আলুর দাম।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলু রপ্তানি হয়েছে। যদিও তা আগের তিন বছরের রপ্তানির তুলনায় অনেক কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে রপ্তানি তো দূরের কথা, আমদানি করেও বাজার সামাল দিতে পারছে না সরকার।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মৌসুমের আলু কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ শুরু হয়। এ বছর এলাকাভেদে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে উৎপাদন কম হওয়ার কারণে এবারে নির্দিষ্ট সময়ের আগে থেকেই কোল্ড স্টোরেজের আলু বিক্রি শুরু হয়েছে।

তবে এই মৌসুমে আলু উৎপাদনের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি বিবিএস। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪ লাখ মে. টন।

আলুর মূল্য ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির কারণে ‘বেশি করে আলু খান ভাতের ওপরে চাপ কমান’ কৌশল এখন আর কাজ করছে না। উল্টো ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে যাওয়ায় গরিবের পাত থেকে সরে যাচ্ছে জনপ্রিয় সবজিটি।