আষাঢ় মাসে চারিদিকে বৃষ্টির পানিতে থইথই থাকার কথা। সেখানে বৃষ্টি তো পরের কথা, আকাশে দেখা মিলছে গর্জন দেয়া মেঘের। উল্টো জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে রোদের তাপে পুড়ছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট সহ আশেপাশের জেলা-উপজেলা। ভ্যাপসা গরমে শরীর থেকে ঝরছে পানি। অসহনীয় গরমে মানুষের পাশাপাশি হাঁপিয়ে উঠেছে গাছপালা সহ প্রকৃতি।

আষাঢ় মাসের এই ভ্যাপসা গরমে কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুতের অকল্পনীয় লোডশেডিং। দিনরাত মিলিয়ে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং এ পড়তে হচ্ছে এই উপজেলাবাসীকে। প্রতি এক ঘন্টা পরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। দিনের তুলনায় রাতে বিদ্যুতের এই যাওয়া আসা খেলা যেন আরো জমে উঠে।

দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ঘোড়াঘাট জোনাল অফিসের দেওয়া তথ্য বলছে, ডুগডুগিহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র থেকে পৃথক ৯টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় প্রতি এক ঘন্টা পরপর প্রতিটি ফিডারে লোডশেডিং দিচ্ছে কতৃপক্ষ। দিনের বেলা এই ৯টি ফিডারে বিদ্যুতের চাহিদা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মেগাওয়াট। সেখানে বরাদ্দ পাওয়া যায় ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। রাতের বেলা এই বিদ্যুতের চাহিদা ১১ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলছে মাত্র ৭ মেগাওয়াট।

অপরদিকে দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় আজ বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার বাসিন্দা মীর হান্নান বলেন, বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে আমরা ব্যবসা বানিজ্য করতে পারছিনা। গরমে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে উঠছে। বিল নেওয়ার সময় মিটার চার্জ, ডিমান্ড চার্জ সহ যত্রযত্র চার্জে ভরপুর। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় তাদের দুর্ণীতি শুরু হয়ে যায়।

পৌর শহরে প্যাডেল রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন গোলাম রসূল। তিনি বলেন, দিনের বেলা রোদের তাপে গা (শরীর) সেদ্ধ হয়ে যাওছে। গরমে শরীর থেকে সারাক্ষণ ঝর্নার মত পানি ঝরোছে। রাতে বাড়ির ঘুমাবার গেলে শুরু হয় বিদ্যুতের তেলেসমাতি। গরম বেশি হলে বিদ্যুতের যাওয়া আসাও বেশি হয়।

দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দিনাজপুরের আশপাশে ইতিমধ্যে বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দু‘একদিনের মধ্যে গরম কিছুটা কমে যাবে।

দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ঘোড়াঘাট জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান বলেন, দিনের বেলা লোডশেডিং কম হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক ভাবে রাতের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়। এতে চাহিদাও বাড়ে। চাহিদা অনুযায়ী গ্রীড থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় রাতে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।