শরিয়তপুরের নড়িয়ায় পূর্ব বিরোধের জেরে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৬ দিন পার হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, মামলা করতে গেলে উল্টো তার স্বামীকে ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখেন ওসি।
ভুক্তভোগী ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের ডেমরগাঁও এলাকার প্রবাসী জসিম মৃধার সাথে একই এলাকার ফারুক মৃধার সাথে একটি সাঁকো তৈরি নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ তৈরি হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন (মঙ্গলবার) রাতে দিকে ফারুক মৃধা তার দলবল নিয়ে এসে প্রবাসী জসীম মৃধা ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রুপাকে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে পাঠিয়ে দেয় মোস্তাফিজুর রহমান। পরে জসীম মৃধা তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রুপাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দিলে পথিমধ্যে তাকে মামলা দায়েরের কথা বলে মুঠোফোনে ডেকে নেয় ওসি। এসময় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান মামলা না নিয়ে উল্টো জসীম মৃধা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস ছৈয়ালকে ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখেন বলে অভিযোগ উঠে।
ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার রুপা বলেন, আমি রাতে চিকিৎসা শেষে স্বামীর সাথে বাসায় ফিরছিলাম। বাড়ির কাছাকাছি আসলে ফারুক মৃধা দলবল নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। থানায় গেলে বিচার না নিয়ে উল্টো আমার স্বামীকে তারা আটকিয়ে রাখে। আমাকে একা একা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
জসিম মৃধা অভিযোগ করে বলেন, ওসি মামলা না নিলে, আমি স্ত্রীকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তির জন্য রওয়ানা দেই। পথিমধ্যে তিনি ফোন করে আবার থানায় যেতে বললে, স্ত্রীকে একটি দোকানে বসিয়ে রেখে থানায় যাই। আমি সেখানে গেলে আমাকে ও ইউপি মেম্বার আক্কাস ছৈয়ালকে ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখে। আমি তখন জানতাম না আমার স্ত্রী কি অবস্থায় আছেন। পরে রাত তিনটার দিকে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে আমি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীকে খুঁজে পাই। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছিলো। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বিঝারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্কাস ছৈয়াল বলেন, জসিম মৃধা তার স্ত্রী ও আমাকে নিয়ে নড়িয়া থানায় থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি মামলা না নিয়ে উল্টো জসিমকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। আমি জসিমকে এসপি স্যারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করার জন্য পরামর্শ দেই। ওরা যখন শরীয়তপুরের দিকে রওনা হয় এরপর ওসি জসিমকে ফোন করে থানায় এনে আমাকে ও জসিমকে ৫ ঘন্টা আটকে রাখে। ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সাথে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।
হামলার বিষয়ে অভিযুক্ত ফারুক মৃধা বলেন, যাতায়াতের জন্য খালের উপর একটি সাঁকো তৈরি করতে গেলে জসিম মৃধা ও তার লোকজন আমাদের বাঁধা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।
এদিকে আটকে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাঁকো তৈরি নিয়ে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিলো। চেয়ারম্যান বলেছিলো সামান্য বিষয় নিয়ে মামলা নেয়ার দরকার নেই, বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেছে। জসিম নামের ওই ছেলে থানায় এসে উল্টাপাল্টা কথা বলছিলো। পরে আমি তাকে বলেছিলাম ঘটনা সত্য হলে মামলা নিবো। বিষয়টি তদন্ত করতে সরেজমিনে পুলিশও পাঠিয়েছি। তবে আটকে রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহবুবুল আলম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।