বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রলীগ নেত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হান (৩৫)। রোববার দুপুরে মামলা দায়েরের খবর পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার ভোর ৪টায় পিতাসহ লন্ডনে পালিয়ে গেছেন এই নেতা।

মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী এক নেত্রী (২৯) রোববার নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা জজ আবদুর রহিমের আদালতে এ মামলাটি করেন। আদালত ভিকটিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

রায়হান নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের মোল্লাবাড়ির মো. ইউসুফ আলীর ছেলে। ওই মামলায় ছাত্রলীগ নেতা রায়হান ছাড়াও তার পিতা মো. ইউসুফ আলী (৬৫), ভাই বাবু (৩৮) ও খালাতো বোন বেগমগঞ্জ উপজেলার সেতুভাঙ্গা এলাকার ফরাজি বাড়ির মো. সবুজ ফরাজির স্ত্রী কলিকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে।

আদালতে দায়ের করা অভিযোগ ও ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রীর অভিযোগে জানা যায়- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেত্রী ও ছাত্রলীগ নেতা ইসমাঈল হোসেন রায়হানের পরিচয় থেকে গভীর সম্পর্ক ও শেষপর্যন্ত প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এরই মধ্যে বিয়ের প্রলোভন এবং বিয়ের পর ভিকটিমকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার প্রতারণামূলক কথা বলে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক স্থানে নিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখেন রায়হান।

ওই ভিডিওচিত্র (ধারণকৃত) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ও এসব আপত্তিকর দৃশ্য ডিলিট করে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার ধর্ষণ করে। এছাড়া ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিপরীতে ভিকটিম ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর আরও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন রায়হান। দাবিকৃত ওই টাকা রায়হানকে না দিলে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রীর সব আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে রোববার লন্ডন চলে যাবে বলে ভিকটিমকে হুমকি দেয়।

কোনো উপায় না পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত বৃহস্পতিবার মামলা করতে যান ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী; কিন্তু পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে তাকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে বলে। পরে রোববার দুপুরে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলাটি করেন।

রায়হানের বিরুদ্ধে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে পুলিশে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তাকে হয়রানি এবং তাদের ভয় দেখিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক এক ডিআইজির ভাগনে পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলির হুমকি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এম জাকির হোসাইন যৌথ স্বাক্ষরে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেন স্পেন ছাত্রলীগের কমিটি। স্পেনে চাকরিরত অবস্থায় ছাত্রলীগের পদ-পদবি ব্যবহার করে ইসমাঈল হোসেন রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এসব প্রশ্ন উঠলে এবং নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের টনক নড়ে।

দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার্থে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপরও ছাত্রলীগের ওই পদবি ব্যবহার করে রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ করে আসছিলেন।

স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হানের মোবাইল ফোনে সোমবার দুপুরে কল দেওয়া হলে ফোনটি রিসিভ করেন জনৈকা মহিলা। তিনি উত্তেজিত হয়ে নাম্বারটি তার বলে দাবি করেন এবং রায়হান এই নাম্বারের সিমটি তার স্বামীকে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এরপর রায়হানের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিলে প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কিছু সময় পর তিনি নিজেই ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।

মাদারীপুরের ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে কিভাবে তার সম্পর্ক হয়- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার রেন্ট-এ কারের ব্যবসা থাকায় সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ভিকটিম মামলার বাদী রায়হানের বাড়িতে এসেছেন বলে স্বীকার করেন।