তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং ভিটামিন কে ও ভিটামিন বি সহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ অর্থকরী একটি ফসল কাজু বাদাম। পাহাড়ী অঞ্চলে চাষাবাদ হওয়া এই কাজু বাদাম প্রথমবারের মত চাষ হচ্ছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায়। পরিক্ষামূলক ভাবে উপজেলা কৃষি বিভাগ পৃথক ১০ জন কৃষককে বিনামূল্যে কাজু বাদামের চারা বিতরণ করে।
পরিক্ষামূলক এই চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষক। প্রথম অবস্থায় কাজু বাদাম চাষে ফলন হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও, হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। একাধিক বাগানে থোকায় থোকায় ধরে আছে কাজু বাগাম। বাদামের পাশাপাশি ফুলে ভরপুর গাছ। শুধু ফল কিংবা ফুল নয়, ইতিমধ্য গাছ থেকে কাজু বাদাম সংগ্রহ শুরু করেছে কৃষক।
এই অঞ্চলের মানুষ কাজু বাদামের গাছের সাথে পরিচিত নয় বললেই চলে। তাই অনেকেই প্রথম দেখাতে চিনতে পারছেন না এই কাজু বাদামের গাছ। প্রথম অবস্থায় কাজু বাদাম চাষে ফলন হবে না, এমন সম্ভাবনায় এই ফসল চাষকে বোকামী ভাবত স্থানীয়রা। তবে গাছে ফলন দেখে অনেকটাই আশ্চর্য্য তারা।
গত দুই বছর আগে উপজেলার ১০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্য কাজু বাদামের চারা বিতরণ করেছিল উপজেলা কৃষি বিভাগ। ফেলে রাখা পতিত জমিতে এসব চারা রোপন করেছিলো কৃষক। তিন বছরের মাথায় ফল আসার কথা থাকলেও, একাধিক বাগানে দুই বছরেই ধরেছে কাজু বাদাম।
গতকাল উপজেলার পালশা ইউনিয়নে অবস্থিত দুটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ ফিট উচ্চতার গাছে ধরে আছে সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ফল। এসব ফলের ঠিক নিচেই ঝুলছে কাজু বাদাম। বেশ কয়েকটি গাছের নিচে পড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় কাজু বাদাম। বাগানের চারপাশে গন্ধ ছড়াচ্ছে কাজু ফল। ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে পরিপক্ক কাজু বাদাম সংগ্রহ করছে কৃষি শ্রমিক।
নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এই অর্থকরী ফসল পাশ^বর্তী ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিলে দীর্ঘদিন থেকে চাষ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি সহ অন্য পাহাড়ী জেলা চাষ হচ্ছে এই বাদাম। তবে প্রথমবারের মত সমতল জেলা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় কাজু বাদাম চাষ সফলতা পেল।
নানা পুষ্টিগুণ থাকায় বাংলাদেশ সহ বিদেশে কাজু বাদামের ব্যাপক চাহিদা আছে। পাশাপাশি রান্নায় খাবারের স্বাদ বাড়াতেও এই বাদাম ব্যবহারের প্রচলন দীর্ঘদিনের। বিশ^ বাজারে এই বাদামের দামও আকাশচুম্বী। প্রতি ১০০ গ্রাম কাজু বাদামে শর্করা আছে ৩০ দশমিক ১৯ গ্রাম, পদার্থ আছে ৪৩ দশমিক ৮৫ গ্রাম, প্রোটিন রয়েছে ১৮ দশমিক ২২ গ্রাম এবং পানি রয়েছে ৫ দশমিক ২০ গ্রাম। এছাড়াও কাজু বাদামে ১২ প্রকারের ভিটামিন এবং ১০ প্রকারের খনিজ পদার্থ আছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামে কাজু বাদাম চাষ করেছে ফরহাদ মিয়া নামে একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘আমার জমিটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিলো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত দুই বছর আগে আমি কাজু বাদামের চাষ করি। যেহেতু এই ফসল আমাদের এলাকা কিংবা আশেপাশে আগে কখনও চাষ হয়নি। তাই ফলন হওয়া নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মানুষও আমাকে বলত যে তুমি বোকামী করেছে। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ৩ বছর অবধি দেখব যে, ফল হয় কিনা! দুই বছরের মাথায় আমার বাগানে ফল এসেছে। আমি হারভেষ্ট শুরু করেছি। সত্যি বলতে আমার নিজের কাছেই অবাক লাগছে।’
গাছে ফল হলেও কাজুবাদাম বাজারজাত করা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত কৃষক। বিশেষ প্রক্রিয়ায় খোসা ছড়িয়ে বের করতে হয় এই কাজু বাদাম। প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায়, কৃষি বিভাগের সহযোগীতা প্রত্যাশা তাদের। অপরদিকে সব ধরণের সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
একই ইউনিয়নের আবিরের পাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে জমিতে কাজু বাগাম চাষ করেছেন আদিবাসী নারী জেস্টিনা হেমরম। তিনি বলেন, ‘প্রথমের দিকে কাজু বাদামের গাছ লাগানো দেখে মানুষ আমাকে পাগল বলত। গাছ যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল তখন অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করত যে এটা কিসের গাছ। দীর্ঘসময় পরিচর্যা করেছি। এ বছর প্রথমবারের মত আমার বাগানে বাদাম ধরেছে। আমি অনেক খুশি। এখন অনেকেই আমার কাছে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে আসে এবং কাজু বাদাম চাষে আগ্রহ দেখায়।
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন, পরিক্ষামূলক চাষে সফলতা আসলে আগামীতে বানিজ্যিক ভাবে কাজু বাদাম চাষ করা হবে। এই কাজু বাদাম বিদেশে রফতানী করে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ন বিভিন্ন ফল ও ফলস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, নতুন নতুন জাত উদ্ভবনের পাশাপাশি নতুন কিছু ফল ও ফসলের পরিক্ষামূলক চাষে সফলতা অর্জন করেছি আমরা।
বার্তা বাজার/জে আই