সমাজের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মেয়ের বাবার বাড়ী থেকে শশুর বাড়ীতে বিভিন্ন উপঢৌকন পাঠানো হয়। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে উপহারের নাম করে গরু-ছাগল, খাদ্য-দ্রব্য কিংবা টাকা পয়সা সহ অনেক কিছু উপঢৌকন দিতে হয়। তেমনি এক দিনমজুর বাবা তার মেয়ের শান্তির জন্য ঋণ করে একটি ছাগল সহ আনুষঙ্গিক বাজার সামগ্রী পাঠিয়েছেন। ছাগল পচন্দ না হওয়ায় তা ফেরত পাঠানো হয়। মেয়ের বাবা পাঠানো ছাগল আর গ্রহণ না করায় ঝটিলতার সৃষ্টি হয়। জটিলতা নিরশনে এগিয়ে আসলে উপঢৌকনের সেই ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জনপ্রতিনিধি। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নে।

জানা যায়, বছর খানেক আগে সোনাদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মাইজচরা গ্রামের খায়ের মাঝির ছেলের সাথে একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের এনায়েত হোসেনের মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর এনায়েত বিভিন্ন সময় মেয়ের শশুর বাড়িতে উপহার পাঠায়। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদের উপলক্ষ্যে নিজে কোরবানী না করে মেয়ের জন্য ধার দেনা করে একটি ছাগল সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠায়। কিন্তু ছাগলটি পছন্দসই না হাওয়ায় মেয়ের শ্বশুর রিক্সাযোগে ইহা ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পথিমধ্যে রিক্সা থেকে ছাগলটি পড়ে একটি পা ভেঙ্গে যায়। এতে বিপত্তি ঘটে আরেকটা। মেয়ের বাবা পঙ্গু ছাগলটি আর গছতে চাই না। দোটানায় পড়তে হয়েছে রিক্সাওয়ালা ছালাউদ্দিনকে।

রিক্সা চালক ছালাউদ্দিন জানান, ছাগলটি নিয়ে আমি মহাবিপদে পড়েছিলাম। যে পক্ষের বাড়িতে নিই সে পক্ষই ফেরত পাঠায়। অবশেষে ছাগলটি নিয়ে সরাসরি মেয়ের শ্বশুর এলাকার মিষ্টু মেম্বারের (সোনাদিয়া ১নং ওয়ার্ড মেম্বার) কাছে জমা দিয়ে ঝামেলামুক্ত হই। রিক্সাওয়ালা ঝামেলামুক্ত হলেও ছাগল গ্রহণ করে বিপাকে পড়েছেন মিষ্টু মেম্বার।

ঘটনা সম্পর্কে মিষ্টু মেম্বার জানান, মেয়ের শ্বশুর খায়ের মাঝি আমার এলাকার বাসিন্দা। রাগারাগি করে হয়তো ছাগলটি ফেরত পাঠিয়েছে। আমি জানার পর ছাগলটি আমার বাড়িতে রেখেছি। বর্তমানে ছাগলটির চিকিৎসা খরচ আমি চালিয়ে নিচ্ছি । দু’পক্ষের সাথে কথা বলে সমস্যাটি সমাধান করে দেব।

মেয়ের বাবার এনায়েত হোসেন জানান, আমার মেয়ে যেন তার শ্বশুর বাড়িতে ভাল থাকতে পারে সেজন্য ছাগলটি পাঠিয়েছি। কিন্তু বেয়াই যা করেছে তা আর বলতে চাই না। পরে আমার মেয়ের অশান্তি হবে। এ বিষয়ে ছেলের বাবা খায়ের মাঝির সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

একটা মেয়েকে তার পরিবার সামর্থ্য অনুযায়ী লালন-পালন করার পর বাকি জীবন সুখে-শান্তিতে থাকবে এ প্রত্যাশায় অপরিচিত একটা ছেলের হাতে আদরের মেয়েটাকে তুলে দেয়া হয়। এতে আমাদের প্রচলিত সমাজে পাত্র বা পাত্রের পরিবারের মন খুব একটা ভরে না। আর তাই খুশি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন দিতে হয়। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে উপহারের নাম করে গরু-ছাগল, খাদ্য-দ্রব্য কিংবা টাকা পয়সা সহ অনেক কিছু উপঢৌকন দিতে হয়। এই উপঢৌকনের জন্য কিছু লোভী ছেলের বাবার কারণে আমাদের চারপাশে ঘটে যায় এমন কতোশত ঝামেলা ও বীভৎস্যকর ঘটনা।

এলাকার সচেতন মহল বলছেন, শশুর বাড়িতে মেয়ে যাতে সুখে থাকতে পারে সে জন্য বাবা-মা উপহারস্বরূপ ছাগল-গরু সহ ইত্যেকার কতো কিছু যে ছেলের বাড়িতে পাঠায় তার ইয়ত্তা নেই। সেই উপঢৌকনে কোনরূপ ত্রুটি হলে ছেলে পরিবার ঘটিয়ে বসে নানান অঘটন। আর এই অযাচিত যৌতুক প্রথা, যা সমাজের প্রচলিত ভাষায় খুশি করা-কে কেন্দ্র করে কন্যার পিতাকে অনেক সময় সুদের মতো ঋণের আবর্তে জড়াতে হয়। সমাজে যেন এমন নিকৃষ্ট ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য এই ছেলের বাবার শাস্তি হওয়া দরকার।