কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার (১৭)। প্রেমে পড়েন এক সন্তানের জনক মমিনুল ইসলামের (২৮)। তারা দুজনেই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা। গত ১৪ জুন কোচিং পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায় মমিনুলের সাথে। মেয়েকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও না পেয়ে, মনিনুল সহ তার পরিবারের আরো দুই সদস্য বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দাখিল করে মনিরার বাবা। কিশোরী অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পর প্রযুক্তির সহযোগীতায় শক্রবার (২১ জুন) নিখোঁজ মনিরাকে উদ্ধার এবং মমিনুলকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় কিশোরী মনিরার বাবা বাদী হয়ে মামলা করলে শনিবার সকালে তাদেরকে দুজনকে দিনাজপুরের আদালতে পাঠায় পুলিশ। মনিরা পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সীদ্ধান্ত নিলে আদালত প্রেমিক মমিনুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তবে শুরু মনিরা-মমিনুলের গল্প নয়! প্রতিনিয়তই প্রেমের বলি হচ্ছে শত শত ছেলে ও তাদের পরিবার। ছেলে-মেয়ে নিজেদের সম্মতিতে জড়িয়ে পড়ছে প্রেমে। এরপর পরিবারের সম্মতি না থাকায় এবং অজ্ঞতাবশত পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছেন এসব যুগল। এমন ঘটনার ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে থানায় অপহরণের অভিযোগ ও এজাহার দাখিল করছেন মেয়ের পরিবার। অভিযোগ প্রাপ্তির পর যথারীতি বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুস্বরণ করে মেয়েক উদ্ধার করছে পুলিশ। প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে-ছেলের ক্ষেত্রে মেয়ের সীদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পরিবার অথবা ছেলের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের নিচের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীর ক্ষেত্রে ছেলে পক্ষ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে পুলিশ।

ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী গত জানুয়ারী থেকে চলতি জুন মাস পর্যন্ত থানায় মেয়ে বা কিশোরী অপহরণের অভিযোগ এসেছে ৫টি। অভিযোগ প্রাপ্তির পর নিখোঁজ মেয়েকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে থানা পুলিশ। এসব উদ্ধারের চারটি ঘটনায় থানায় মামলা করেছে মেয়েদের পরিবার। কারাবরণ করতে হয়েছে ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের।

প্রেমে জড়ানো এবং পরবর্তীতে পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ ছেলে-মেয়ে উভয়ের মত থাকলেও, মেয়ের পরিবারের অপহরণ মামলা দায়েরের পর পুলিশ যখন উদ্ধার করছে তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মেয়ে। ফিরে যেতে যায় পরিবারের কাছে। এতে শেষ পর্যন্ত আইনি বেড়াজালে পড়তে হয় ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যদের। তবে খুব কম সংখ্যাক প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে মনের মানুষের সাথে সংসার বাঁধে।

দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী শরিয়ত হোসেন বলেন, “১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ৩৭৫ ধারার সাথে ২০১৮ সালের শিশু আইনে একটি সংঘর্ষ আছে। অপহরণের ক্ষেত্রে আদালত ভিকটিমের জবানবন্দিকে প্রাধান্য দেয়। এক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ১৮ নিচে হলেও আদালত ১৬ বছরের উর্ধ্বে থাকা কিশোরীর জনাববন্দিকে আমলে নিয়ে নিরাপদ হেফাজত প্রদান করে। তবে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে আদালত শিশুর কোন স্বাক্ষ্য আমলে নেন না। এমন ঘটনাও আছে অপহরণের শিকার কিশোরী আদালতে দাঁড়িয়ে জনাববন্দি দেন যে ‘সে ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে।’ তবে প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে ও পরিবার মামলার ভূক্তভোগী হচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।”

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, “মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ কিংবা নিখোঁজের কোন অভিযোগ পেলে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করি। উদ্ধারের পর ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে আমরা তাদের সীদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করি। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে পরিবারের সীদ্ধান্ত আমাদের কাছে মূখ্য এবং আইনও সেটিই সমর্থন করে। সে অনুযায়ী আমরা মামলা গ্রহণ পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করি।”