স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কিছু মানুষ সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদর্শন ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ক্লান্তিহীন সমাজে ঘৃণার চাষবাস করছে। তারাই বারবার ধর্মের দোহাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে উদ্ধত হয় চিরচেনা সম্প্রীতির সমাজ।
এ যেন এক ছাই চাপা সাম্প্রদায়িক ঘৃণার আগুন। ঠুনকো অজুহাত পেলেই বিনষ্ট করতে চায় সম্প্রীতির সমাজ।
এমনই এক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চেষ্টা করেছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নে। জনকল্যাণে তৈরি হওয়া রাস্তার কাজে বাঁধা দিতে শনিবার (৩ জুন) দিবাগত রাত আনুমানিক দুইটার দিকে মন্দির তৈরি করা হয়।
রাতের আঁধারে মন্দির তৈরি করে সকালে গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়, মন্দির ভেঙে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিযোগকৃত জায়গার উপর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি গিয়ে মিলিত হয়েছে কয়েকটি এলাকার মানুষের জন্য তৈরি হওয়া একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে। জনকল্যাণের জন্য কাবিখা প্রকল্পের আওতায় থাকা রাস্তাটির পূর্ণ নির্মাণের কাজ ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে বন্ধ করতে একটি মহল বিভিন্ন অপচেষ্টা চালাচ্ছিলো। সেই মহলটি দারস্থ হয় কোর্টের। সেখানেও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে রায় হওয়ার পর অবশেষে তৈরি করে এক জঘন্য পরিকল্পনা।
রাতারাতি তৈরি করা হয় মন্দির। অভিযোগ তুলে, হিন্দুরা সংখ্যালঘু বিধায় তাদের উপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের মন্দির।
এভাবেই ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ধর্মের নামে এদেশটিকে তাণ্ডবের মুখে ফেলার জন্য অদৃশ্য একটি মহল দিচ্ছিলো উসকানি ও ইন্ধন।
ধর্মের নামে দেশে এ রকম অর্গানাইজড ক্রাইম এই প্রথম নয়। আগেও ঘটেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সমালোচিত হয়েছে বহিঃ বিশ্বে।
তবে মুকসুদপুরের ঘটনাটি উদঘাটনে (৪ জুন) সরেজমিনে উপস্থিত হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম ইমাম রাজী টুলু।
মুকসুদপুর পৌর মেয়র আশরাফুল আলম, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে পূর্বের ফুটেজ, ছবি ও স্থানীয় পার্শ্ববর্তী জনসাধারণের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে সত্যতা নিশ্চিত করে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করে স্থানীয় হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে রক্ষা করেন মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম ইমাম রাজী টুলু।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর পৌর মেয়র আশরাফুল আলম জানান, পরিকল্পনা করে ধর্মকে পুঁজি করে একটা পক্ষ সহিংসতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিলো। জনসাধারণের জন্য খাল পাড়ের জায়গায় রাস্তা হচ্ছে। তবে রাস্তার কাজে মালিকানা কিছু জায়গা বাঁধতে পারে। সেখানে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের মন্দির তৈরি করতে চায়। তাদের মন্দির রাস্তার পাশে থাকা জায়গায় আমার নিজস্ব অর্থায়নে করে দিবো।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, বিপুল মন্ডল নামে জমির মালিক শনিবার আমাকে ফোন দিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলো। কাজের ব্যস্ততায় আজ (রবিবার) এসেছি। অভিযোগের জায়গা একটি খাল পাড়। খাল এবং খাল পাড় দুটোই সরকারি জমি। এখানে পূর্বে একটি রাস্তা ছিলো। সেই রাস্তা দিয়ে এক/দেড় হাজার পরিবার যাতায়াত করে। তাই রাস্তাটি পুনঃনির্মাণের কাজ চলছে। এটাকে বাঁধা দিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত করার জন্য অভিযোগকারী ঐব্যক্তি রাতারাতি একটি মন্দির তৈরি করেছে।
ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত করার চেষ্টাটি জঘন্য ও শাস্তিমূলক অপরাধ। তারপরও ঘটনার সাথে জড়িত বিপুল মন্ডলও তার অনুসারীদের বুঝিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সরকারিভাবে তাদের মন্দির করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বার্তা বাজার/জে আই