ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে আলবেনিয়ায় নির্মাণাধীন ইটালির অভিবাসী শিবিরগুলো আগস্টে খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷বুধবার আলবেনিয়া সফরে গিয়ে এ ঘোষণা দেন ইটালির ডানপন্থি এই সরকারপ্রধান৷
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও নিরুৎসাহিত করতে উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে আলবেনিয়ায় দুটি আশ্রয় শিবির তৈরি করছে ইটালি৷পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে উদ্ধারের পর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সরাসরি আলবেনিয়ার আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে রেখেই তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই করবে ইটালি৷ যাদের আবেদন মঞ্জুর করা হবে, তাদের ইটালি নিয়ে আসা হবে৷ আর যাদের আবেদন বাতিল হয়ে যাবে, তাদের নিজ নিজ দেশে ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানো হবে৷ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে গেল বছরের শেষ দিকে একটি চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতাও শেষ করেছে দেশ দুটি ৷ চলছে আশ্রয় শিবির দুটির নির্মাণ কাজ৷
যদিও এমন উদ্যোগের সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ নিজেদের ভূখণ্ডের বাইরে আশ্রয়ের পদ্ধতি স্থানান্তর করায় ইটালির কড়া সমালোচনা করেছে তারা৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আলবেনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন মেনে চলতে বাধ্য নয়৷ ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দেশটিতে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়৷
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সরাসরি ইটালির উপকূলে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং মানবিক সংস্থাগুলোর উদ্ধারকারী জাহাজের মাধ্যমে উদ্ধার করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আলবেনিয়ার কেন্দ্র দুটিতে নেয়া হবে না৷ আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ইটালি কর্তৃপক্ষ যাদের উদ্ধার করবেন, তাদেরকেই সরাসরি আলবেনিয়া নিয়ে যাওয়া হবে৷পরিকল্পনাটি চলতি মাসেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সময়মতো নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল৷
তবে, আলবেনিয়া সফরে গিয়ে ইটালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি জানালেন, ১ আগস্ট থেকে আশ্রয় শিবির দুটি চালু করার বিষয়ে আশাবাদী তিনি৷সাংবাদিকদের মেলোনি বলেন, ‘‘এমন চুক্তি অনেক দেশের সঙ্গে করা যেতে পারে এবং তা অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোগত সমাধানের অংশ হতে পারে৷’’ইটালি ও আলবেনিয়ার মধ্যকার এই চুক্তিকে উদাহরণ টেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনে চিঠি দিয়েছে জোটের ১৫টি দেশ৷ চিঠিতে আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে রেখে আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পথ তৈরির আহ্বান করা হয়েছে৷মেলোনি বলেন, ‘‘অনিয়মিত পথে ইউরোপে আসতে চাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণে এই পরিকল্পনাটি একটি অসাধারণ পন্থা৷
আলবেনিয়াতে নির্মাণাধীন কেন্দ্র দুটিতে সংগঠিত অপরাধী চক্রের অনুপ্রবেশ হতে পারে এবং তাতে ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে যে আলোচনাটি রয়েছে, তা একেবারেই খারিজ করে দিয়েছেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা৷ বরং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তার আন্তরিক সমর্থন আবারো পুনর্ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইতালি অনেকবার আলবেনিয়াকে সাহায্য করেছে এবং আমরা যদি একবারও ইটালির উপকারে আসার সুযোগ পাই, তবে আমরা সেই সুযোগটি নেব এবং হৃদয় থেকে তা করব৷’’ আলবেনিয়ায় জর্জা মেলোনিকে স্বাগত জানাতে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শেংজিনে আসেন এডি রামা৷ সেখানেই প্রথম অভ্যর্থনা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ এরমধ্যে শেষ হয়েছে৷
আলবেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের ছোট বন্দর শেংজিনে প্রাথমিক অভ্যর্থনা প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণের কাজ করা হবে৷
মেলোনি বলেন, ‘‘অপ্রাপ্তবয়স্ক, নারী, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং দুর্বল মানুষদের আলবেনিয়ায় আনা হবে না৷’’ প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে যাওয়া হবে সাত কিলোমিটার দূরের জাডার গ্রামে৷ সেই গ্রামে রয়েছে আশ্রয় প্রার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা৷ সাত দশমিক সাত হেক্টর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ১০টি ভবন৷ সেখানে অন্তত তিন হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে রাখা হবে৷ কেন্দ্র দুটির পরিচালনা এবং নিরাপত্তার সব দায়িত্ব থাকবে ইটালির হাতে৷ আলবেনিয়া শুধু বাহ্যিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা দেবে৷চুক্তি অনুযায়ী, আলবেনিয়ার জাদারে দ্বিতীয় আশ্রয় শিবিরটি নির্মাণাধীন রয়েছে৷ প্রতি বছর এই কেন্দ্র দুটির মাধ্যমে ৩৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২২ সালে ইটালির ক্ষমতায় আসেন ডানপন্থি রাজনীতিবিদ জর্জা মেলোনি৷ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর ভূমধ্যসাগরে এনজিওগুলোর উদ্ধারকাজকেও সীমিত করে এনেছেন তিনি৷ কিন্তু তারপরও দেখা গেছে, ২০২৩ সালে অন্তত এক লাখ ৫৮ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন দেশটিতে৷ সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় ৫০ হাজার বেশি৷
টিএম/এআই (রয়টার্স, ডিপিএ)