রাজধানীর উত্তরায় জোর করে গরুর ট্রাক হাটে ঢোকানোর ছবি তোলায় নুরুল আমিন হাসান নামে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে হাট ইজারাদারের লোকজন। তিনি আজকের পত্রিকার উত্তরার সিটি প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

মঙ্গলবার রাতে উত্তরা ১০নং সেক্টরে কামাপাড়া পুলিশ বক্সের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

সাংবাদিক নুরুল আমিনের অভিযোগ, রাত ১২টা ১০ মিনিটে তিনি গরুর ট্রাক জোর করে হাটে ঢোকানোর ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এ সময় হাটের ১৫/২০ জন যুবক তার ওপর এই হামলা চালায়।
সাংবাদিক হাসান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আশুলিয়া হয়ে উত্তরায় আগত ঢাকাগামী কোনো গরুর গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। জোর করেই এসব গরুর গাড়ি উত্তরা ১০নং সেক্টরের কামাড়পাড়া গরুর হাটের লোকজন হাটে ঢোকাচ্ছে, এমন খবর আসে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কামাপাড়া মোড়ে গিয়ে দেখি একটি গরুর গাড়ি কামারপাড়া থেকে টঙ্গীতে এগোচ্ছে। কিন্তু গাড়িটি হাটের লোকজন মোটরসাইকেল দিয়ে রাস্তা বেরিকেড দিয়ে গরুর গাড়ির চালককে মারধর করে পাশের হাটে ঢোকাচ্ছে।’

সাংবাদিক বলেন, ‘এই কাজটি করছিল ২০/২৫ জনের বেশি যুবক। ওই যুবকদের কয়েকজন আবার ট্রাকের ওপরে উঠে ট্রাকচালক ও ব্যাপারীদের সঙ্গে ঝগড়া করছিল। ওই সময় মুঠোফোনে দূর থেকে সেই দৃশ্য ধারণ করার চেষ্টা করতেই ১৫/২০ জন আমার ওপর হামলা চালায়।’

হাসান আরও বলেন, ‘হামলাকালে তারা বলতে থাকে- সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান ও ৫৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সির জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের লোকজন আমরা। তারা হাটে বসে আছেন। তুই কে, তোরে ছবি তোলার ভিডিও করার সাহস দিছে কে? এমন সময় তারা রাস্তার মাঝে ফেলে আমাকে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে। সাথে থাকা মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়।’

ওই সাংবাদকি বলেন, ‘এ সময় আমার আইডি কার্ডটি নিয়ে নেওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করে তারা। চশমা পরা ফর্সা এক যুবক আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে আরেক যুবককে দিয়ে দেয়। তারা টানাহেঁচড়া করতে করতে কয়েকশ গজ সামনের মোড়ের ওয়াচ টাওয়ারের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে রাস্তার উপর ফেলে সবাই মিলে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে।’

তিনি জানান, হামলার ঘটনা দেখতে পেয়ে কামারপাড়া মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মারুফ ছুটে আসেন এবং তাকে রক্ষা করে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। সেই সাথে মোবাইলটি উদ্ধার করে দেন।

সাংবাদিক অভিযোগ করেন, উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের চেকপোস্টের সামনে হামলার ঘটনা ঘটলেও তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। চেকপোস্টের কোনো পুলিশ সদস্য হামলাকালে ছুটে আসেননি, তারা শুধু কয়েকশ গজ দূর থেকে দেখেই গেছেন। আবার হামলাকারীরা সেখানে কর্তব্য এএসআই কাজিমকে বলতে শোনা যায়- আপনারা বিষয়টি দেখেন। আমরা আপনাদের দেখছি। হামলার ঘণ্টাখানেক পর খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মেহেদী হাসান অপূর্ব আসেন এবং হামলার বিষয়ে জানতে চান।

জানা গেছে, এঘটনার পর তাকে পুলিশ উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ্‌ মাস্টার সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা করায়। হামলায় সাংবাদিকের ডান হাতের জোড়ায়, গলার ডান পাশে, বুকে, পিটেসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের কর্তব্যরত সার্জেন্ট মো. মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ভেতরে ছিলাম। তখন বাহিরে দেখি ঝামেলা হচ্ছে। পরে বেরিয়ে এসে দেখতে পাই সাংবাদিক হাসান ভাইকে মারধর করছে। পরে তাকে রক্ষা করার জন্য আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি।’