প্রতিবছর ভূমি সপ্তাহে শুদ্ধাচারে নীতিবাক্য শুনাগেলেও চিহ্নিত দালাল-ওমেদারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েগেছে টেকনাফ উপজেলা ভূমি অফিস। এই অপকর্মে সরাসরি জড়িত অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। ফলে সেবা প্রার্থীদের দূর্ভোগের শেষ নেই। ভূমি সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্টানে সাধারণ সেবাপ্রার্থীর চেয়ে দালাল চক্রের তৎপরতা ও উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
ভূমি অফিস সংলগ্ন কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে রয়েছে বেশ কজন দলিল লেখক। একেক জন দলিল লেখকের আওতায় রয়েছে ৭-৮ জন দালাল। সারাক্ষন এই দপ্তর থেকে সেই দপ্তরে দাপিয়ে বেড়ান তারা। উপজেলা ভূমি অফিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দালালের উৎপাত সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কানুনগো দফতরে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চিহ্নিত দালালদের দখলে থাকে উপজেলা ও সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চেয়ার টেবিল। দালালদের খপ্পর থেকে রেহাই পাচ্ছেনা প্রান্তিক ভূমি সেবা প্রার্থীরা। বছরের পর বছর ধরে এটাই টেকনাফ ভূমি অফিসের বাস্তব চিত্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের বেশ ক’জন ভূমি সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলার শুরুতেই তারা জানাযায়, ভূমি অফিসে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। খতিয়ান, নামজারী, দিয়ারা সংশোধনী ও ভূমিসংক্রান্ত মামলাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিকট যেতে চাইলে দালালদের ডিঙ্গিয়ে যাওয়া যায়না। গেলেও এক সপ্তাহের কাজ দুই মাসেও হয়না। নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে করলে কাজ গুলো দ্রুত সম্পাদন হয়। কারণ দালালদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে গোপন সম্পর্ক। আবার অনেক সময় দালালরাও টাকা নিয়ে প্রতারনা করে। দুই সপ্তাহের কথা বলে একটি নামজারি সম্পাদন করতে ৭/৮ মাস ঘুরানোর পর বিভিন্ন দফতরে খরচ হয়েছে বলে টাকা ফেরত দেয়না। অনেক সময় কেউ জোর করে কিছু টাকা আদায় করতে পারলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে ফাইল আটকিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ভয়ে কাউকে নালিশ করা যায়না। আমরা সেবা প্রার্থীরা এদের কাছে একেবারেই জিম্মি।
বক্তব্যের সত্যতা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূমি অফিস বা সরকারি কোনো দপ্তরের কর্মচারী না হলেও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিনিয়তই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই ডজনের বেশী চিহ্নিত দালাল। তাদের পিছে পিছে ছুটছে কয়েকজন অসহায় ভূমি সেবা প্রার্থী নারী-পুরুষ। বিকেলের পর থেকে দ্বীর্ঘ সময়ধরে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কানুনগো ও সার্ভেয়ারের দফতরে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বসে দালালদের ফাইল ঘাটাঘাটি করতে দেখাযায়। প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে এরা ভূমি অফিসের অঘোষিত কর্মচারী। এদের আচর দেখে বুঝাযায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এদের সম্পর্ক কতটা গভীর। অনুসন্ধানে এরকম চিহ্নিত অন্তত দুই ডজন সক্রিয় দালালের নাম উঠে এসেছে ‘বার্তা বাজার’র হাতে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত চিহ্নিত কয়েকজন ওমেদার। এরা সেবা প্রার্থীদের থেকে কন্ট্রাক নিয়ে দাপুটে ভাবে এটেবিল থেকে সেই টেবিলে নামজারির ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। সেবা প্রার্থীদের কাছে এরা কর্মকর্তাদের ক্যাশিয়ার বা এজেন্ট হিসেবে পরিচিত। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজের হাতে অবৈধ অর্থ লেনদেন না করলেও তাদের হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেনের কাজে ব্যবহার করা হয় এসব ওমেদারদের। নুন আনতে পান্তা ফুয়ায় এমন পরিবার থেকে উঠে আসা ওমেদার নামক দালালরা একেক জন গাড়ি, বাড়ি, নারীসহ কোটি টাকার জায়গা সম্পদের মালিক। রোজ সকালে বিদেশী ব্রান্ডের সুগন্ধি মেখে ভূমি অফিস এলাকায় আসে দামী বাইক হাকিয়ে। এদের লাইফ স্টাইল খুবই উচ্চবর্গের। কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ে এরকম অন্তত নয় জন দালালের নিয়ন্ত্রনে থাকে সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পত্র। অনুসন্ধানে এদের সহায় সম্পদের সচিত্র তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, বছর দুয়েক আগে জেলা প্রশাসক সরেজমিনে উমেদারদের উৎপাত বুঝতে পেরে সকল প্রকার উমেদার ভূমি অফিস প্রাঙ্গনে ঢুকা নিষেধ ঘোষনা করেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে ছিলেন। কয়েকমাস পর অসাধু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ে আবারো যে যারযার অবস্থানে ফিরে আসে। যেদিন উর্ধতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে কথা থাকে সেদিন আগে থেকেই তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
এই বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সৈয়দ সাফকাত আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এই অফিসে আমি নতুন এসেছি। দালাল ও ওমেদারদের উপদ্রপের বিষয়টি আমারও নজরে এসেছে। এই বিষয়ে অফিসের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। কিছু দালালকে আমরা চিহ্নিত করেছি, আরো কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে দালালদের নামের তালিকা অফিসের সম্মুখে জনসার্থে দ্রুত টানিয়ে দেয়া হবে। ভুমি অফিস জনগনকে সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর। সুতরাং আমি থাকাকালে এখানে কোন দালাল, টাউট, বাটপারের জায়গা হবেনা।
অতিরিক্ত যেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল বলেন, কোন নন অফিসিয়াল লোক ভূমি অফিসের মতো স্পর্শকাতর দফতরে কাজ করতে পারবেনা। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যদি তাদের সাথে যোগ সাজসের প্রমান পাওয়াগেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূক্তভোগীরা চাইলে সরাসরি আমার কাছে অভিযোগ করতে পারবে।