বান্দরবানের লামায় স্বামী মো. সামশু আলম (৩৫) কে খুন করতে খুনির সাথে কন্টাকে চুক্তি করেন নিজের স্ত্রী হাছিনা আক্তার (৩৩)। গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ত্রী ও খুনির ৯ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি লোমহর্ষক ফোনালাপের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। যা এখন উপজেলার সর্বত্র আলোচনায়।

জানা যায়, উপজেলার সরই ইউপির ৭নং ওয়ার্ড সালাম মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা আব্দু সালামের ছেলে সামশু আলম কে পারিবারিক কলহের জের ধরে খুন করতে তার স্ত্রী হাছিনা আক্তার বাঁশখালী এলাকার জনৈক খুনির সাথে চুক্তি করেন।

ফোনালাপের কথোপকথন, ‘খুনি- একেবারে খুন করে ফেলবো, নাকি হাত পা ভেঙ্গে দিব? স্ত্রী হাছিনা- আগে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবে, তারপর বাপ-ভাই বলে পা ধরে যদি ক্ষমা চায় এবং কাউকে কিছু বলবেনা কথা দেয় তাহলে ছেড়ে দিবে। না হয় একেবারে শেষ করে ফেলবে।

খুনি- খুনের জন্য মাবুরে কত দিয়েছো আর জসিমকে কত টাকা দিয়েছো? হাছিনা- মাবুকে ১৫ হাজার জসিমকে ১০ হাজার টাকা।

খুনি- জসিম আমাকে ৪ হাজার টাকা দিয়েছে। কাজ হলে আর টাকা দিবে? হাছিনা- আর দিবনা, খুন করে ওর (সামশু আলমের) মোটর সাইকেল নিয়ে যাবে।

খুনি- না আমরা গাড়ি নিবনা। হাছিনা- গাড়ি না নিলে মানুষ তো বুঝবে আমি খুন করিয়েছি। গাড়ি নিয়ে গেলে সবাই বুঝবে মোটর সাইকেলের জন্য খুন করা হয়েছে। আমাকে কেউ সন্দেহ করবেনা।’

হাছিনা আক্তার একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড হাবিবুর রহমান পাড়ার আব্দুল মালেক ও রওশন আরা বেগমের মেয়ে। সামশু আলম ও হাছিনা আক্তারের সংসারে ১ মেয়ে ও ৩ ছেলে রয়েছে। ২০০৭ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ হয়। সম্পর্কের অবনতি হলে কিছুদিন যাবৎ হাছিনা আক্তার তার ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছে। সামশু আলম পেশায় একজন খামারি ও ব্রয়লার মুরগীর ব্যবসায়ী।

সামশু আলম জানান, তাকে (হাছিনা) বিবাহ করার পর থেকে কখনো শান্তিতে ছিলাম না। ৪ জন সন্তানের দিকে তাকিয়ে নীরবে সংসার করেছি। আমার সংসারে কোন অভাব নেই। পরকীয়ার বাঁধা দেয়ায় এই অশান্তি। সে আমাকে কয়েকবার মেরেছে। গত ৪ জুন লামা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার নামে মামলা করেছে। ৯ জুন আমি আদালত থেকে জামিন নিই। বান্দরবান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছে বলে জেনেছি। খুনের এই অডিওটি গত ২৮ মে ২০২৪ইং তারিখের। একজনের সহায়তায় টাকা-পয়সা দিয়ে এই অডিওটা আমি উদ্ধার করি। বর্তমানে আমি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। নিরাপত্তার জন্য সোমবার (১০ জুন) আমি লামা থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যাই। থানার অফিসার ইনচার্জ আমাকে একটি অভিযোগ লিখে জমা দিতে পরামর্শ দেয়।

এই বিষয়ে জানতে স্ত্রী হাছিনা আক্তারের দুইটি মুঠোফোন নাম্বারে কল দেয়া হয়। নাম্বার গুলো সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ফেসবুকে অডিও ভাইরাল হলে অনন্য মামুন নামে একজন বলেন ‘রেকর্ড শুনে মনে হচ্ছে লোক গুলো আগে থেকে এই ধরনের অপরাধ করে। তাই সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’ মোঃ বোরহান, পল্লব পাল, আবুল কালাম মজুমদার সহ অনেকে ‘তাদের আইনের আওতায় আনা হোক’ এমন মন্তব্য করেন।

সরই ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ হোছেন বলেন, তাদের পারিবারিক কলহ অনেকদিনের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফোনালাপটি শুনে আমি নিজেও আতঙ্কিত। সামশু আলমকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি।

লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম শেখ বলেন, সামশু আলম থানায় আসলে তাকে অভিযোগ লিখে জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।