এপ্রিল মাসের শুরু থেকে বয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে তীব্র তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে জনজীবনে অস্বস্তি পৌঁছেছে চরমে। একই অবস্থা প্রাণিকুলেও। হিটস্ট্রোকের কারণে রায়পুরে ক্যাম্পেরহাট ও সায়েস্তানগর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে পোলট্রি খামারের অসংখ্য মুরগি।
এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। এই পরিস্থিতিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন ১০% পর্যন্ত কমেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।
অপরদিকে, উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে এক ডাক্তারসহ কর্মকর্তাদের সেবা না পেয়ে ভোঁরচৈতাল বলতে বলতে (গালমন্দ) বাড়ীতে ফিরে যেতে দেখা গেছে কয়েকজন খামারিকে। রোববার সকাল ১১টায় সরেজমিন হাসপাতালের সামনে গেলে এচিত্র দেখা যায়। খোঁজখবরতো নেই না বরং নানানভাবে হয়রানি করেন বলে অভিযোগ খামারি গিয়াস উদ্দিন সহ একাধিক খামারির।
প্রাণীসম্পদ দপ্তরের অফিস সহকারি জসিম জানান, কর্মকর্তা আতাউর রহমান হ্বজে যাওয়ায় গত ৪ জুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রামগন্জ উপজেলা কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম। আর মোফাজ্জল হোসেন ডাক্তার হিসেবে রয়েছেন গত চার বছর। এ উপজেলায় প্রায় দুইশত খামার আছে ( সরকারি হিসাবে ১৪৩টি খামার)। আর ৩৬০টি গরুর খামার রয়েছে। ক্ষতির কারণে মুরগির খামার গুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ ব্যবসা মুখ থুবড়ে পরবে বলে আশঙ্কা করছে খামারিরা।
চরআবাবিল ইউপির ক্যাম্পেরহাট এলাকার খামারি রাজিব বিশ্বাসের খামারে মুরগি আছে প্রায় ১০ হাজারের মতো। তিনি তার ৫টি খামারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন শুরু করেন। হিটস্ট্রোকে বুধবার ৫০০ লেয়ার মুরগী মারা গেছে। প্রতিদিন তার চার থেকে পাঁচটি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। আর এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলেও তার ৫-৬টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে জেনারেটর ভাড়া করে মুরগিকে বাতাস দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
এই খামারি বলেন, “মুরগিদের জন্য আলাদাভাবে বাতাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই গরমের কারণে মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে। মুরগির বেড়ে ওঠা ও শারীরিক ওজন অনেক ধীরগতিতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগিগুলো মারা যাচ্ছে। তীব্র দাবদাহ কমে গেলে মুরগি মারা যাওয়াও কমে যাবে। তবে এখনও আশঙ্কাজনক হারে মুরগি মারা যাচ্ছে না। বেশি মুরগি মারা গেলে মাথায় হাত পড়ত। আমার প্রতিটি মুরগিই নিয়মিত ডিম দিচ্ছে।”
সায়েস্তানগর গ্রামের খামারি গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমার এখানে প্রায় ১ হাজার মুরগি আছে। গত এক মাসে প্রায় ৩০টার মতো মুরগি মারা গেছে। এসব মুরগিকে বেশি শীতল রাখা যায় না, আবার বেশি গরমেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে মুরগিগুলো মারা যাচ্ছে।”
আজকে রোববার সকাল ১১টায় প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে আসলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাস্তা খাওয়া ও ওষুধ কোম্পানির লোকের সাথে খোশ গল্পে মেতে রয়েছেন। তিন কর্মকর্তাও একই কাজে ব্যাস্ত রয়েছেন। যিনি ডাক্তার পরিচয় দেন তিনি তার কক্ষ বন্ধ করে কোথায় গেছেন কেউ বলতে পারছেনা। বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কার্যালয়ের সামনের একটি ওষুধের দোকানে বসে পরিচিত খামারিদের প্রেসকিপশান দিয়ে থাকেন। মুরগীর খামার দিয়ে নানানভাবে আমরা হয়রানি শিকার হচ্ছি।
হায়দরগন্জ বাজারের গবাদিপশুর ওষুধ বিক্রেতা মোঃ হাসান বলেন, “তীব্র এই গরমে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে মুরগি। গরমের কারণে তারাই হিটস্ট্রোক করছে। খামারি বা স্থানীয়ভাবে যারা মুরগি পালন করছেন, তারা এসে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। একই অবস্থা গরু-ছাগলেও। তবে এখন পর্যন্ত এলাকায় গরু-ছাগল মারা যায়নি।”
কেরোয়া ইউপির পোলট্রি মোঃ রাসেদ বলেন, “তীব্র এই দাবদাহে খামারের মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে। মাংসের স্থিতি ৯৫ থেকে ৬০%-এ চলে এসেছে। ৪০ দিনে একটি ব্রয়লার মুরগি দুই কেজি ওজন ছাড়িয়ে যায়। এখন তা ১ কেজিও হচ্ছে না। খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সঠিকভাবে মুরগির পরিচর্যা করার জন্য।” উপজেলা প্রানী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মকর্তারা মুখ দেখে সেবা দিয়ে থাকেন। যাদের চেনেননা তাদের নানান ভাবে হয়রানি করছেন।
পোলট্রি খামারিদের তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো, শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণক্ষমতার মধ্যে কম মুরগি রাখা, পানিতে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করা, লেবু ও আখের গুড় দিয়ে দুপুরে শরবতের ব্যবস্থা করা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, শেডের ছাদে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা ও নিয়মিত পানি ঢালা, দুপুরে মুরগিকে খাবার না খাওয়ানো।
এসব বিষয় নিয়ে রায়পুরের প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাকিবুল ইসলামের সাথে বলতে গেলে তিনি বলেন, ওষুধ কোম্পানির লোককে বিদায় করে আপনার সাথে পরে কথা বলবো। কিন্তু পরে আর কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রন্জন মিত্র বলেন, “প্রতিটি উপজেলায় আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত খামারগুলো পরিদর্শন করছেন। নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এই তাপমাত্রায় মুরগি বাঁচানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে, তবু চেষ্টা চলছে। ব্রয়লার মুরগি ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।পরে আর পারে না। মুরগির পালনের কারণে তারা এই তাপমাত্রা আরও সহ্য করতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, “ব্রয়লার মুরগি পালনে আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনেকে ফ্যানে বাতাস দিচ্ছে। দুপুরের দিকে বাতাস আরও বেশি প্রয়োজন।” ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার সাথে কথা না বলয় আমি দুঃখিত। যিনি ডাক্তার পরিচয় দেন, প্রকৃতপক্ষে ডাক্তার না, তিনি কর্মকর্তা হোন।।