আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি) এ পর্যন্ত সারাদেশে ৭ হাজার ১টি মামলা দায়ের হয়েছে। সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী।
সোমবার বিকাল ৫টা জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। প্রশ্ন টেবিলে উত্থাপিত হয়। চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আব্দুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী সংসদে জানান, প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের বিচার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তিনজন বিচারক ৬ মাসের ‘শর্টকোর্স অন সাইবার রেজিলিয়েশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, যারমধ্যে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়।
বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের বিচারের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী সংসদে জানান, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার সুনিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সরকার একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নিরলস ভাবে কাজ করছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কোনো অপরাধীই অপরাধ করে পার পাবে না। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যাতে বিচারের সম্মুখিন হতে না হয় সে জন্য খুনি মোস্তাক ১৯৭৫ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে।
মন্ত্রী সংসদে জানান, জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে জেনারেল জিয়াউর রহমান অধ্যাদেশ ইনডেমনিটি বহাল রাখে। খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন মিশনের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। এরপর জেনারেল এরশাদ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বহাল রাখে এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
আইনমন্ত্রী সংসদে আরো জানায়, করোনা মহামারিকালে আদালতে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে বিচারপ্রার্থী সকল পক্ষ এবং তাদের আইনজীবীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে রাষ্ট্রপতি “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০” জারি করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ জুলাই ২০২০ তারিখে “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০” জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। ফলে বিচারাধীন জরুরি বিষয়গুলো ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণ এর সুফল পেয়েছেন। ভার্চুয়াল আদালত স্থাপনের মাধ্যমে বিচার বিভাগে এক নতুন দিগন্ত সূচিত হয়েছে। গত ১১ মে ২০২০ হতে ৪ আগস্ট ২০২০ এবং ১২ এপ্রিল ২০২১ হতে ১০ আগস্ট ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে মোট ৩,১৪,৪৮২টি জামিনের দরখাস্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১,৫৮,১৪৬ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। যার ফলে করোনাকালে জেলখানায় বন্দী আসামিদের অতিরিক্ত চাপ কিছুটা এড়ানো গেছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশে ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন ও অপরাধের বিচার কার্য পরিচালিত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে নারী ও শিশুদের প্রতি সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার সম্পন্ন করা হচ্ছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে ইতোমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ সংশোধন করা হয়েছে।
বার্তা বাজার/জে আই