শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের অন্তত ১০০ জন কৃষকের মরিচ খেত নষ্ট করে মাছের ঘের তৈরির পায়তারা করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ইতোমধ্যে সেখানে ভেকু (এক্সকাভেটর) মেশিন দিয়ে জমির মাটি কেটে বাঁধ দেয়া হয়েও গেছে। এদিকে ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় মাছের ঘের বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গরীব চাষিরা।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের আলী আশ্রাব বেপারী কান্দি এলাকাটি মেঘনা নদীর তীরবর্তী জায়গা। এখানকার মানুষ নদীতে মাছ ধরে ও জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের প্রধান ফসল মরিচ। ওই এলাকায় ১০০ একর একটি বিশাল ফসলি জমি রয়েছে। যেখানে অন্তত ১০০ টি কৃষক পরিবার মরিচ ও আউস ধান চাষ করেন। প্রতিবছর ওই জমিতে দশ হাজার মণ মরিচ ও পাঁচ হাজার মণ আউস ধান উৎপাদন হয়।

সম্প্রতি সেই জমিতে মাছের ঘের করার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল ঢালী ও তার ছেলে মোতালেব ঢালী। ইতোমধ্যে তাঁরা মাছ চাষ করার জন্য কৃষকদের ১০ একর ফসলি জমি দখল নিয়ে রাতের আধারে মাটি কাটা শুরু করেছেন। জমির মাঝখানে মাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বাঁধ। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ কৃষকরা বাঁধা দিতে গেলে প্রতিনিয়ত মারধরের হুমকি দিয়ে চলছে প্রভাবশালী চক্রটি।

স্থানীয় কৃষক মেজবাহ উদ্দিন বেপারী বলেন, আইজুল ঢালী আর হের পুতেরা জোর কইরা জমির মাটি কাইট্টা লাইছে। আমরা যে আর চাষবাদ কিছুই করতে পারমু না। আমি যাতে আমার পোলাপান লইয়া এই জমিটা চাষবাস কইরা খাইতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমিটার রক্ষা চাই।

মালেক কাজী নামের এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার জমিটায় মরিচ চাষ কইরা আও-বাচ্চা (সন্তান) লইয়া চলি, সংসার চালাই। এই ৫৬ শতক জমি আজিজুল ঢালী দখল করে মাছের ঘের কাটতেছে। আমরা এখন কীভাবে বাঁচমু। আমি আমার জমিতে মাছের ঘের করতে দিমু না।

মোশাররফ হোসেন নামের স্থানীয় কৃষক বলেন, তারা রাতের আধারে জমিগুলারে দখল নিয়া মাটি কাটতেছে। বাঁধা দিলেও শুনেনা। ঘেরের মাঝখানে কিছু মানুষের জমি দখল নিয়াও নিছে। আর মাটি কেটে বাঁধ দেয়ার ফলে অন্যসব জমিগুলায় বৃষ্টির পানি জমে যাবে। আমরা কিস্তির টাকা ধার দেনা কইরা ফসল করি এখন এই জমিগুলাতে আর ফসল ফলানো যাবেনা। আমরা এর থেকে বাঁচতে চাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোতালেব ঢালী বলেন, আমাদের জমিটি নিচু ও পানি জমে থাকায় ফসল করতে পারিনা। তাই ঘের কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ঘেরের মাঝখানে যাদের জমি পড়েছে তার প্রথমে ঘের কাটায় রাজি ছিলো, তবে এখন তারা রাজিনা। আমারা সবকিছু ম্যনেজ করেই কাজ করি। আপনি যেটা ইচ্ছে লেখেন সমস্যা নাই। ইউএনও কিংবা প্রশাসনের কেউ এখানে আসবে না।

এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেন নি।