প্রায় ৩ বছর ধরে লালন পালন করে লালুকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কৃষক আব্দুল আলিম ও নূরজাহান দম্পতি। কোরবানির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে গরুটি। তার ওজন হয়েছে ১০মণ। তাই এবারের কোরবানি ঈদে এটিকে বিক্রির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের মহিষবেড় গ্রামের আব্দুল আলিম নিজের কোনো জমিজমা না থাকায়। অন্যনের জায়গায় ঘর নির্মাণ করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন। পাশাপাশি নিজের চারটি গরু লালন-পালন করেন। তার মধ্যে গাভীর একটি ষাড় বাছুর কোরবানির জন্য লালন-পালন শুরু করেন আব্দুল আলিম। আব্দুল আলিম সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকায় বাছুরটি সযত্নে বড় করেন তার স্ত্রী নূর জাহান। তিলে তিলে বড় করা সেই বাছুরটির নাম দেওয়া হয় লালু। এই দম্পতি পরম আদরে নিজের সন্তানের মত যত্ন লালুর।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাওয়ানো হয় লালুকে। অন্যনের জমিতে ঘাস চাষও করেছেন আব্দুল আলিম। পশুটিকে কাঁচা ঘাস, ভুসি, চালের খুদ , ডাল, মাস খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন গোসল করানোসহ নিজের সন্তানের চেয়েও লালুকে বেশি যত্ন করেন এই দম্পতি। দীর্ঘ তিন বছর পর লালুর ওজন দাঁড়িয়েছে এবার ১০ মণে।
লালুকে কিনতে ইতোমধ্যেই স্থানীয় পাইকাররা আসছেন মহিষবেড় গ্রামে। তবে সন্তোষজনক দাম পেলেই গরুটি বিক্রির কথা জানিয়েছেন গরুটির মালিক আব্দুল আলিম। এজন্য দূর-দূরান্তের পাইকারদের কুন্ডা মহিষবেড় গ্রামে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন আব্দুল আলিম। প্রয়োজনে যোগাযোগ ০১৭২৫৩৪৮৬৭৭।
স্থানীয় গ্রামবাসী ইনু মিয়া ও আনু মিয়া জানান, আব্দুল আলিম ও তার স্ত্রী নিজের গাভীর বাছুর থেকে কোরবানি যোগ্য করে তুলেছেন লালুকে। মহিষবেড় গ্রামের লালুর চেয়ে বড় কোরবানির জন্য বড় কোন পশু নেই। আব্দুল আলিম ও নূরজাহান দম্পতি যেভাবে গরুটিকে লালন-পালন করেছেন তা সত্যিই অনুকরণীয়। তাই দূর-দূরান্তের ক্রেতাদের আসার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গরুর মালিক আব্দুল আলিমের স্ত্রী নূর জাহান
বলেন, আমি নিজের সন্তানকে যেভাবে আদর যত্ন করে বড় করছি। সেই ভাবেই লালুকে বড় করে তুলেছি। নিজে না খেয়ে লালুকে দেশীয় খাবার কিনে খাইয়েছি। তবে লালুকে বিক্রির কথা বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নূর জাহান।
গরুর মালিক আব্দুল আলিম বলেন, আমি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরুটিকে বড় করেছি। কোরবানির জন্য যেহেতু বিক্রি করা হবে তাই কোন ধরনের ইঞ্জেকশন বা মোটা তাজাকরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। নিয়মিত খাবার দেওয়াসহ পরিচর্যার কারণে লালুর ওজন হয়েছে ১০ মণ।