ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি বেসরকারী হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের পর ডাক্তারের অবহেলায় সুমাইয়া আক্তার (৩২) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে যায়। উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত মাস্টারাবাড়ি পপুলার হাসপাতালে শনিবার (১ জুন) বিকেলে এই ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার পর স্বজনরা অ্যাম্বলেন্স মালিক আব্দুল হালিমকে আটক করেছেন। ঘটনার পর থেকে লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে রেখে ক্লিনিকের ভবন মালিক মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আপস মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দেয়ার প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে পাগলা থানার মাখল গ্রামের ইসলাম মিয়া তার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারকে প্রসব ব্যথা জনিত কারণে ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত মাস্টারবাড়ি পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় অনাগত সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বলে বিকেলেই ১৬ হাজার টাকা চুক্তিতে দ্রুত সিজারিয়ান অপারেশনের পরামর্শ দিলে বিকেলে হাসপাতালের ডা.মাজহারুল ইসলাম রোগীকে অজ্ঞান করার পরে ডা.আহসান হাবিব সিজারিয়ান অপারেশন করেন এবং সহযোগীতা করেন ওটিবয় মোহাম্মদুল্লাহ।

এ সময় একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে ওটিতেই প্রসূতি মারা যান। সন্ধ্যার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা খারাপ তাকে আইসিও সাপোর্ট লাগবে বলে রোগীর মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন। এ সময় সুমাইয়ার শ্বশুর আসাদ মিয়ার সন্দেহ হলে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ভালুকা সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সুমাইয়াকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা.মাসুদ পারভেজ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি আপসের জন্য হাসপাতাল ভবনের মালিক পল্লী পশু ডাক্তার মফিজ উদ্দিন রোগীর স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে লাশ ফ্রিজিন অবস্থায় রেখে রোববার (২ জুন) বিকেল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।

ঘটনার পর রোববার দুপুরে সুমাইয়ার স্বামী ইসলাম মিয়া তাঁর স্বজনদের নিয়ে ভালুকায় মডেল থানায় এসে বিষয়টি থানার ওসিকে অবগত করলে মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।প্রসূতির স্বামী ইসলাম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। তারা এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

নিগুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান তাইজুদ্দিন মৃধা জানান, হাসপাতালের ভবন মালিকসহ বিবাদীপক্ষ তার কাছে আপসের জন্য আসছিলো, কিন্তু তিনি রাজি না হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে থানায় অভিযোগ দেয়ার জন্য বলেছেন। ভালুকা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.মাসুদ পারভেজ জানান, সুমাইয়া আক্তারকে হাসপাতালে আনার পর ইসিজি করা হলেতাঁকে মৃত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানার জন্য হাসপাতালের পরিচালক মেহেদী হাসান লিপুর মোবাইলে বার বারফোন করে বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন জানান, তিনি ঘটনাটি শুনার পরস্যানেটারী ইন্সপেক্টরকে খোঁজ নেয়ার জন্য বলেছেন।ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন আসছিলো। তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।